April 20, 2024
https://cdn.theatlantic.com/assets/media/img/mt/2015/08/RTX1NEFT/lead_960.jpg?1439057444

https://cdn.theatlantic.com/assets/media/img/mt/2015/08/RTX1NEFT/lead_960.jpg?1439057444

সেসব পরীক্ষায় ট্রাম্প উত্তীর্ণ হয়েছেন কি না সেই বিচারের চেয়ে এখন দেখা যাচ্ছে যে তিনি আরও নতুন বিতর্কের সূচনা করেছেন, যা তাঁর জন্য তো ইতিবাচক নয়ই বরং তাঁর সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছেন তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ক্ষমতাসীন হলে হিলারি ক্লিনটনকে কারাগারে পাঠাবেন বলে যে হুমকি তিনি দিয়েছেন, বিতর্কের পর সে বিষয়ই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে এবং হবে। তিনি বলেছেন যে বিজয়ী হলে তিনি বিচার বিভাগকে ‘নির্দেশ’ দেবেন একজন বিশেষ কৌঁসুলি বা স্পেশাল প্রসিকিউটর নিয়োগ করে হিলারি ক্লিনটনের ‘মিথ্যা’ অনুসন্ধানের জন্য।

তাঁর এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত ক্ষমতার বিভাজনের সঙ্গেই শুধু অসংগতিপূর্ণ নয়, একধরনের একনায়কসুলভ মানসিকতারও প্রকাশ। অতীতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসার কারণে এমনিতেই এই ধারণা চালু আছে যে ট্রাম্পের পছন্দ একনায়ক নেতারা। এখন তাঁর এই বক্তব্য এই ধারণাকেই জোরদার করেছে যে তিনি নিজেও এভাবেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে চাইবেন। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে রাজনীতির বিশ্লেষক ও সংবিধান-বিষয়ক গবেষকেরা এই বক্তব্যকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেই চিহ্নিত করেছেন; তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বীকে জেলে পাঠানোর হুমকিকে মার্কিন মূল্যবোধের পরিপন্থী বলেই মনে করেন। এ ধরনের বক্তব্য এমনকি রিপাবলিকান সমর্থকদের কাছেও আপত্তিকর বলেই প্রতিভাত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সময়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালনকারী রিপাবলিকান দলের সমর্থক আরি ফিশার টুইটারে লিখেছেন, ‘বিজয়ী প্রার্থী তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন না। প্রেসিডেন্ট কোনো ব্যক্তিকে বিচার করার হুমকি দেন না। এ কথা বলা ট্রাম্পের ভুল।’ এ দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ও সাংবিধানিক ব্যবস্থার অধীনে প্রেসিডেন্ট বিচার বিভাগকে ‘নির্দেশ’ দিতে পারেন না, বড়জোর ‘অনুরোধ’ করতে পারেন। কিন্তু সেই ধরনের অনুরোধও কার্যত দেখা হবে নির্বাহী বিভাগের পক্ষ থেকে একধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ হিসেবে এবং তা মানতে বিচার বিভাগ বাধ্য নয়।

তাঁর এই বক্তব্যের সূত্র ধরে মার্কিন রাজনীতির এমন এক অধ্যায়ের কথা স্মরণ হবে, যা মোটেই প্রীতিকর নয়। ১৯৭৩ সালে রিচার্ড নিক্সনের আমলে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য বিচার বিভাগ আর্চিবল্ড কক্সকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন সেটা পছন্দ করেননি। ফলে এ নিয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপোড়েন তৈরি হয়। প্রেসিডেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এলিয়ট রিচার্ডসনকে ‘নির্দেশ’ দেন যেন স্পেশাল প্রসিকিউটরকে তিনি বরখাস্ত করেন, কিন্তু রিচার্ডসন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম রাকেলসহাউস সেই নির্দেশের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। সেটা ছিল ২০ অক্টোবর ১৯৭৩। আইন অনুযায়ী সলিসিটর জেনারেল রবার্ট বর্ক অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পান এবং তিনি বিশেষ কৌঁসুলিকে বরখাস্ত করেন। নিক্সনের এই ভূমিকা এখনো নিন্দনীয় বলেই বিবেচিত। তিনি এই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণেই ১৯৭৪ সালের আগস্টে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান রবার্ট বর্ককে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন, কিন্তু সিনেট সেই মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে। অনেকের মতেই বর্কের ১৯৭৩ সালের ভূমিকা এর অন্যতম কারণ। এখন ট্রাম্পের এই বক্তব্য সেই কলঙ্কজনক ইতিহাস সামনে নিয়ে এসেছে।

বিতর্কে ট্রাম্পের আরেকটি কাজ ছিল ২০০৫ সালের ভিডিওর বক্তব্যের বিষয়ে ক্ষমা চাওয়া, যেন অন্তত পক্ষে তাঁর দলের নেতারা এই কথা বলতে পারেন যে ট্রাম্প ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু বিতর্কের শুরুতেই এই প্রশ্ন উঠলে ট্রাম্প আবারও তাঁর পুরোনো যুক্তি হাজির করেন, আর তা হলো এগুলো একধরনের রসিকতা, কথার কথা। তাঁর বক্তব্যে, ভঙ্গিতে কিংবা আচরণে অনুশোচনার লেশমাত্র দেখা যায়নি। এই বিষয়ে উপস্থাপক সিএনএনের সাংবাদিক এন্ডারসন কুপারের সঙ্গে তিনি বিতর্কেই জড়িয়ে পড়েন। উপরন্তু এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আবারও বিল ক্লিনটনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে আসেন। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা দরকার যে বিতর্কের আগেই তিনি চারজন মহিলা, যাঁরা আশির ও নব্বইয়ের দশকে বিভিন্ন সময়ে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে আসছেন, তাঁদের নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁর এসব আচরণ যে নারী ভোটারদের মধ্যে তাঁর সমর্থন হ্রাস করবে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। এই ভোটার গোষ্ঠীর মধ্যে তাঁর সমর্থন ইতিমধ্যেই কম। এ যাবৎ সব হিসাবনিকাশে দেখা যাচ্ছে যে বিজয়ী হতে চাইলে যেকোনো প্রার্থীকে এই ভোটারদের সমর্থন অবশ্যই পেতে হবে।

এই বিতর্কে ট্রাম্পের কি কিছুই অর্জন নেই? অবশ্যই আছে। আর তা হলো তিনি তাঁর মৃতপ্রায় প্রার্থিতায় প্রাণ সঞ্চার করেছেন। এই অর্থে যে তিনি তাঁর কট্টর সমর্থকদের মধ্যে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে তিনি এখনো আছেন এবং ঠিক যেভাবে তিনি দলের ভেতরের প্রাথমিক পর্যায়ের নির্বাচনে কথা বলেছেন, ঠিক সেভাবেই বাকি সময়টার প্রচার চালাবেন। প্রকাশিত ভিডিওর ব্যাপারে তাঁর অবস্থান এই বার্তাই দিচ্ছে যে রিপাবলিকান দলের নেতা বা দলের মধ্যপন্থী সমর্থকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরির ইচ্ছে তাঁর নেই। দল তাঁকে নিয়ে কী করবে সেটা দলের বিষয়, তিনি দলের জন্য কোনো রকম ছাড় দিতে রাজি নন—এটাই হচ্ছে তাঁর বার্তা। এখন দেখার বিষয় রিপাবলিকান দলের নেতারা কী করেন।

প্রথম আলো, অক্টোবর ১১, ২০১৬

Leave a Reply