March 19, 2024

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার চলছে। তখন যা ঘটেছিল তা কোনোভাবেই মীমাংসিত বিষয় নয়। নব্বইয়ের দশকে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে দেশ যখন সংগঠিত হচ্ছিল তখন অনেক প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীই এর স্বপক্ষে অবস্থান নিতে দ্বিধা করেছেন এই ভেবে যে, এটি একটি মীমাংসিত বিষয়, একে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়োজন নেই।

এটি কোন বিচারে মীমাংসিত বিষয় তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। যারা এই অবস্থান নিয়েছিলেন তারা এখনও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেননি। তাদের প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের পক্ষে না হলেও, তাদের আমরা সঙ্গে পাইনি। সবাই রাস্তায় নেমে আন্দোলনে শরিক হন না, কিন্তু ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয় করা অসম্ভব নয়, কথায়-কাজে বের হয়ে আসে।

শঙ্কাটা অন্য জায়গায়– এই তথাকথিত প্রথিতযশা ব্যক্তিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যখন আমাদের বিদেশি বন্ধুরা কথা বলেন, মতান্তরে চাপ দেন, কিংবা পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনরা একে মীমাংসিত বিষয় বলেন– তখন আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না, এসব বুদ্ধিজীবীরা স্বদেশে না হলেও বিদেশে তাদের মতপ্রকাশে বেশ সক্রিয়! তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছুতেও সময় লাগে না।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যে বিচারপ্রক্রিয়া চলমান তা নিয়ে আমাদের দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন ছাড়াও চিন্তাবিদদের মধ্যে এক ধরনের বিভাজন বিদ্যমান। রাজনৈতিক বিভাজনটি রাজনৈতিক কারণে হলেও চিন্তাবিদদের মধ্যে বিভক্তি মূলত এর বিচারপ্রক্রিয়া, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও স্বাধীনভাবে বিচার বিভাগকে তার কাজ করতে দেওয়া নিয়ে।

বিভিন্ন মহল থেকে স্পষ্ট অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন সরকার একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন বা করতে চেয়েছেন– ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টিও এই অভিযোগ থেকে। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান থেকে শুরু। ক্রমে বিষয়টি ভিন্ন খাতে গড়িয়েছে। সে সময় সত্যিকারের যে গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল তা সময়ের ব্যবধানে প্রশ্নের মুখে পড়ে।

গণজাগরণ মঞ্চের দাবির সঙ্গে সাধারণ মানুষের একাত্মতা থাকার কারণে, ট্রাইব্যুনালের রায়ে অপরাধীর সাজার পরিমাণ কম হলে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করতে না পারার যে বিধান ছিল তা সংসদে আইন করে পরিবর্তন করে। যার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে; সেই রায়ে আপিল বিভাগ তার ফাঁসির আদেশ দেয়। ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর বিতর্ক চলতে থাকে– আসামি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করতে পারবে কিনা? রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা?

রাষ্ট্রপক্ষে বলা হল, সংবিধানের ৪৭-ক (১) অনুচ্ছেদ মোতাবেক যদি সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোনো আইন প্রযোজ্য হয়, সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংবিধানের ৩১, ৩৫ (১) ও (৩) এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের বিধান প্রযোজ্য হবে না। ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনো সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য বা অন্য কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তিসমষ্টি বা সংগঠন কিংবা যুদ্ধবন্দিকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করবার বিধান-সংবলিত কোনো আইন বা আইনের বিধান সংবিধানের সঙ্গে অসমঞ্জস বা পরিপন্থী হলেও, সেই আইন বাতিল বা বেআইনি বলে গণ্য হবে না বা কখনও বাতিল বা বেআইনি হয়েছে বলে গণ্য হবে না।

অনুচ্ছেদ ৪৭-ক (২) অনুসারে যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত কোনো আইন প্রযোজ্য হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির সংবিধানের অধীনে প্রদত্ত কোনো প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করার অধিকার থাকবে না। অর্থাৎ সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগকে স্বীয় রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনার যে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো অপরাধী প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন না। সংবিধানের ৪৭-ক অনুচ্ছেদটি ১৯৭৩ সালে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে সন্নিবেশিত। এই অনুচ্ছেদটি সংবিধানের মূলধারার পরিপন্থী কিনা, মৌলিক অধিকারের হেফাজত যৌক্তিক কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।

১৯৭৩ সনের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত সাজা কম হলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করার সুযোগ ছিল না, পরবর্তীতে সেটি আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে সংযোজন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ যদি আইনের সমতা আনয়নের জন্য আইন পরিবর্তন করতে পারেন তাহলে অভিযুক্ত পক্ষকে সে সুযোগ দেওয়া হবে না কেন– এই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন। এসব নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। রাষ্ট্রের বিধি-বিধান সমতাভিত্তিক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক নিতান্তই আমাদের দেশের অন্তর্গত বিষয়। তা নিয়ে অন্যের পরামর্শ আমরা নিতে পারি, কিন্তু অন্যের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরদারি মেনে নেওয়া যায় না।

আমাদের মনে রাখা দরকার বিচার একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। যে কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপরিচালনার নীতির পাশাপাশি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ইছার প্রতিফলন বিচার ব্যবস্থায় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেখানে রাষ্ট্রের বৃহত্তর অংশ চায় একাত্তরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হোক, সেখানে একটি ক্ষুদ্র অংশ বরাবরই চেয়েছে এই বিচার যেন না হয়। এটি ভিন্নমাত্রা পেয়েছে যখন অভিযুক্তপক্ষ আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্রকে নিয়ে নানাপ্রকার হস্তক্ষেপ করাতে সফল হয়েছে।

৩১ জানুয়ারি, ২০১২ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে প্রসিকিউটর এডভোকেট জেয়াদ আল মালুম বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিচারে অভিযুক্তের অধিকার কতটুকু সংরক্ষিত হচ্ছে তা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এই বিষয়ে আমাদের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জানতে চাইলে এক ধরনের প্রশ্ন ছিল, কিন্তু পুরো বিষয়টি যখন আসামিপক্ষের লবিস্ট টোবি ক্যাডম্যানের প্রচেষ্টার ফসল– তখন এর উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সন্দিহান হয়ে পড়ি।

আমাদের দেশে ফৌজদারি আইনে সাধারণ নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কেন, বিশ্বের কোনো দেশই মাথা ঘামায়নি। তাহলে আজ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে অভিযুক্তের অধিকার সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে তাদের এই অতিরিক্ত মাথাব্যথার কারণ সহজেই অনুমেয়।

এই মাত্রাহীন সীমালঙ্ঘন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত আচরণ আমরা জাস্টিফাই করেছি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে আমাদের মতামত উপস্থাপন করে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কীভাবে আমাদের বিচার ব্যবস্থা চলবে তা নিতান্তই আমাদের নিজেদের ব্যাপার। এতে বিদেশিদের নাকগলানো এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

প্রসঙ্গান্তরে বলা প্রয়োজন, আমাদের দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড একটি স্বীকৃত বিষয়। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের বিচার ব্যবস্থা থেকে এই দণ্ড বাদ দিলেও, আমাদের দেশের মতো অনেক দেশেই এটি প্রচলিত আছে। তাছাড়া আমাদের দেশে হত্যা, ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানো, এসিড নিক্ষেপসহ অন্যান্য অনেক অপরাধের জন্য এটি প্রচলিত একটি শাস্তির বিধান।

আর তাই মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্যে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ‘ডেথ রেফারেন্স’-এর জন্য আলাদা একটি বেঞ্চ রয়েছে। তার মানে, আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিনিয়তই কারও না কারও মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে। আলোচিত মামলাগুলির কথাই যদি ধরি তাহলে দেখা যায়– মনির হোসেন, এরশাদ শিকদার কিংবা বাংলা ভাইকে আমরা ফাঁসি দিয়েছি।

তাদের সময় এসব বিদেশি মোড়লদের খবরদারি দেখা যায়নি। অর্থাৎ সে সময় ফাঁসি নিয়ে তাদের কোনো উচবাচ্য শোনা যায়নি, তবে এখন কেন? এ প্রশ্নের উত্তর পূর্বের আলোচনা থেকে পাওয়া যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখি, ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা নিয়ে যে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে তাতেও অনেকে ভাবছেন বিদেশি হস্তক্ষেপ ছিল। সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জেনেছি আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে কাদের মোল্লার রায় কার্যকর না করার অনুরোধ করেন।

পরবর্তীতে ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয় যা যে কোনো বিচারে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। আমরা জেনেছি, জামায়াতে ইসলামীর এমপি শের আকবর খান এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন এবং ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ এবং ইমরান খানের দল তেহরিক-এ-ইনসাফ এই প্রস্তাবে সমর্থন করে। পিপিপি এবং এমকিউএম পার্টি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।

কাদের মোল্লার রায়ের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের এহেন আচরণ আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হস্তক্ষেপ। দলমতনির্বিশেষে এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। দেশের বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে আমাদের এক হতে শিখতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৭ ডিসেম্বর এই নিন্দা প্রস্তাব পাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব নজরুল ইসলাম খান এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের নিন্দা প্রস্তাব পাসের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান পরিস্কার না করে সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে বলেন– ‘‘সরকারের আগেই এর প্রতিবাদ জানানো উচিত ছিল। প্রতিবাদ বা ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।’’

এ প্রেক্ষিতে সবাইকে বলব, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর দেওয়ার জন্য। দলমতনির্বিশেষে সে দেশের সকল রাজনৈতিক দল এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরাই কেবল পারি না। ভারত এর জবাবে দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী তুলে নিয়েছে। আশা করা যায় তাদের এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেবযানী খোবরাগাড়েকে অশালীনভাবে দেহতল্লাশি করার প্রতিবাদ জানালে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এটি ভিয়েনা চুক্তি অনুযায়ী কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। বোঝা যায়, দুটি শক্তিশালী পক্ষের দৃঢ় অবস্থান আরও গড়াবে।

পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের তেমন উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই। একটি বিশেষ ভাবধারার নাগরিক ছাড়া কেউ পাকিস্তানে বেড়াতে যান বলেও মনে হয় না। তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগীও নন। বরং তারা আমাদের পশ্চাৎপদতার সহযোগী। তাই পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ জানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এটি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে অভিযোগ দায়ের করে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় বিষয়ে অন্যের হস্তক্ষেপ প্রতিহত করাটাই হবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে উপযুক্ত জবাব।

কখনও কখনও উদাহরণ সৃষ্টি করতে হয়– যেমনটি আমরা করেছিলাম একাত্তরে। যদিও আমাদের উচিত ছিল আরও অনেক আগেই পাকিস্তানের ইতোপূর্বের আচরণগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তারিত তুলে ধরা। একাত্তরের গণহত্যার জন্য, ৯৩ হাজার সেনা ও ১৯৮ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার করার অঙ্গীকারের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল অথচ তা করা হয়নি, আমাদের প্রাণ ও সম্পদের যে হানি হয়েছিল তার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের ন্যায্য দাবি তোলা– এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে আবেদন করা– এখন সময়ের দাবি।

এ সমস্ত বিষয় এখনও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে এবং এসব মীমাংসার ঐতিহাসিক দায় আছে। তাহলে পাকিস্তানের নতুন প্রজন্মও জানতে পারত– একাত্তরে ‘ঢাকার পতন’ হয়নি বরং ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল অনেক রক্তের বিনিময়ে। যে দেশ এখন অনেক ক্ষেত্রেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে, যেখানে তারা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের চরিত্র নিয়ে আরও বেশি ব্যর্থতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। পাকিস্তানের এই মুহূর্তে উচিত আমাদের নিয়ে চিন্তা না করে আমেরিকার হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া।

আমরা অপেক্ষায় থাকলাম সেদিনের জন্য যেদিন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সে দেশের নাগরিকের বিয়ের অনুষ্ঠানে, মসজিদে প্রার্থনার সময় বা জানাজা পড়ার প্রাক্কালে ড্রোন হামলা ঠেকাতে নিন্দা প্রস্তাব পাস করবে। বন্ধ করতে পারবে মার্কিন আগ্রাসন।

[প্রথম প্রকাশ – বিডিনিউজ২৪, মতামত বিশ্লেষণ, ১২/১৮/২০১৩]

Leave a Reply