Before I built a wall I’d ask to know
What I was walling in or walling out,
And to whom I was like to give offence.
[Mending Wall, Robert Frost]
লেখার উদ্দেশ্য
দীর্ঘদিন ধরে অপরিশোধিত থাকা মজুরির দাবিতে অনশনে গেছেন তুবা গার্মেন্টসের অনেক শ্রমিক। ঈদের সময়ে সবাই যেখানে আনন্দে মেতে থাকার কথা, ঠিক তখনই অনন্যোপায় হয়ে অনশনের মত একটি সমাধানের সন্ধান করতে হয়েছে তাঁদের। বিষয়টি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের মজুরি এবং ভাতা বিষয়ক নিরাপত্তার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আরো কিছু প্রশ্নকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনার উপলক্ষ্য তৈরি করেছে। শ্রমিকদের পাওনা এবং মজুরি অপরিশোধিত থাকার ঘটনার আমরা অনেকবার দেখেছি। ফলে সাময়িক সমাধানের পাশাপাশি একই সাথে টেকসই এবং ন্যায্য সমাধান নিশ্চিত করতে কী কী করা যায় তারও অনুসন্ধান করা দরকার। বাংলাদেশের শ্রম বাজার এবং পোশাক শিল্পের বাস্তবতায় অনেক ধরনের জটিলতা এবং বিশেষত্ব রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে সম্যক না জেনে বাইরে থেকে থেকে প্রস্তাব করা সমাধানকে চূড়ান্ত বিবেচনা করা যাবে না। কিন্তু একটি প্রাথমিক বিবেচনা হাতে থাকলে এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে যারা ভালভাবে জানেন তাঁদের ভাবনাকে আমলে নিয়ে টেকসই এবং ন্যায্য সমাধান বের করা যেতে পারে। সেই আলোচনার সূত্রপাতের জন্যই এই লেখা।
এখনকার সময়ে জাতীয় এবং অঞ্চলগত উন্নয়ন শিল্প উৎপাদনের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। ঠিক এ কারণে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শিল্প উৎপাদনের অর্থনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর গবেষনামূলক কাজ হয়েছে। তাতে এই খাতগুলোতে কী হয়েছে তা নিয়ে তাত্ত্বিক এবং পর্যবেক্ষনলব্ধ আলোচনা পাওয়া যায়। কিন্তু সে ধাঁচে কার্যকর আলোচনায় জন্য যে ধরণের তথ্যের এবং পর্যবেক্ষণ নির্ভর উপাত্ত প্রয়োজন বাংলাদেশের পোশাক শিল্প প্রসঙ্গে তা সম্ভবত অপ্রতুল। এটা কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগীতার ভিত্তিতে এই খাত সম্পর্কে যাচাই এবং পুরনরুৎপাদনযোগ্য (verifiable, reproducible) তথ্যের ভাণ্ডার তৈরির উদ্যোগ নেয়া খুব দরকার। তথ্যপ্রবাহ যেমন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, তেমনি পেশাদার আচরণকেও উৎসাহিত করে। বলা হয় “হিসাবের গরু বাঘে খায় না” – এই প্রচলিত প্রবাদে যে প্রাচীন জ্ঞান নিহিত আছে সেটা তৈরি পোশাক শিল্পে কোন বিবেচনাতেই কম প্রাসঙ্গিক নয়।
চলমান সংকটে ক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ
তুবা গার্মেন্টসের ঘটনার প্রেক্ষিতে শ্রমিক স্বার্থ আলোচনার সুবিধার্থে এ নিয়ে ক্রিয়াশীল প্রধান গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করা যাক। এভাবে দেখলে প্রধানত চারটি গোষ্ঠীর নজরে আসে-
এক. শ্রমিক এবং তাদের সংগঠন (যদি থাকে)
দুই. কারখানা মালিক এবং তাদের সংগঠন বিজিএমইএ
তিন. সরকার (এবং রাষ্ট্র)
চার. শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার দাবিতে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক সংগঠন ও সমাজকর্মীগণ
এই চারটি গোষ্ঠীর ভূমিকা এবং কার্যক্রমের উপর দীর্ঘ মেয়াদে শ্রমিকের স্বার্থ বহুলাংশে নির্ভর করছে। তবে বিদেশি ক্রেতাদেরো হয়ত এখানে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ আছে। কিন্তু পঞ্চম একটি গোষ্ঠী হিসাবে তাদের প্রাসঙ্গিকতাকে দূরে রাখাই আপাতত সঙ্গত মনে করছি। এক বাইরের কেউ এসে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দিয়ে যাবে এমন আশা করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া কোন সমাজের জন্যই স্বাস্থ্যকর নয়। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি নিরাপত্তার প্রশ্নটি আন্তার্জাতিক মাত্রায় গুরুত্ব পাবার মত পর্যায়ে যেতে দেওয়া মানে সমস্যাকে আরো ঘনীভূত হতে দেয়া। বিষয়টি সেখানে যাবার আগেই কিছু করা যাবে বলে আশা রাখতে দোষ কী?
এই গোষ্ঠীগুলোর পরস্পরের প্রতি আস্থা কেমন? লক্ষ্য করা দরকার শ্রমিক এবং মালিকদের সম্পর্কটি সব সময় তাদের পারস্পরিক স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত। প্রতিটি গোষ্ঠীকেই অন্য গোষ্ঠীগুলোর সাথে একধরনের বোঝাপড়ায় যেতে হয় নিজেদের গোষ্ঠীগত লক্ষ্য পূরণের জন্যে। শ্রমিক এবং মালিকদের সুসম্পর্কের বিষয়টি এই দুইটি শ্রেণীর স্বার্থের সাথেই সম্পর্কিত। ফলে গোষ্ঠীগত ভাবে যখন তারা ভাবেন তখন পরস্পরের স্বার্থ রক্ষার পক্ষেই তাদের অবস্থান নেবার কথা, অন্তত মজুরি প্রসঙ্গে এটা ভাবা যায়। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে একজন মালিক সুযোগ পেলে শ্রমিককে ঠকানোর চেষ্টা করবেন এমনটা হতে পারে। ফলে যখনই দেলোয়ারের মত কোন মালিকের উদ্ভব ঘটে তখন শ্রমিক এবং মালিক দুই গোষ্ঠীর জন্যই তা অসুবিধাজনক। কিন্তু পোশাক শিল্প উৎপাদনের সাথে জড়িত সকল উদ্যোক্তাই দেলোয়ারের মত অপেশাদার, অদক্ষ এবং অসৎ নয়, হবার কথা নয়। সম্ভবত পোশাক শিল্পে দেলোয়ারদের সংখ্যা হাতে গোণা। কাজেই ব্যক্তি পর্যায়ে একজন মালিকের আচরণ যেখন সমষ্টিগত ভাবে গোষ্ঠীর স্বার্থকে বিপন্ন করছে সেখানে ব্যবসায়িদের সংগঠনের এই সমস্যা সমাধানে উৎসাহি হবার কারন আছে।
শিল্পখাতে বিদ্যমান প্রণোদনা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজানো গেলে এই সংখ্যাকে কমানো-বাড়ানোও যায়। প্রচলিত ভাবে “দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন” নিশ্চিত করার মত প্রণোদনা ব্যবস্থা সে ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। কাজেই প্রশ্ন হচ্ছে পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে যারা দেলোয়ার নয় তাদের সদাচরণের জন্য কি পুরষ্কার আছে? আর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে যারা দেলোয়ারের মত অপেশাদার এবং অদক্ষ তাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য শিল্পের সামগ্রিক পরিসরে (industry wide) কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে বা তৈরি করা যায়? স্পষ্টতই উৎপাদন ব্যবস্থায় দেলোয়ারদের মত উদ্যোক্তাদের দাপটের সাথে উপস্থিত থাকাটা শ্রমিক এবং মালিক কোন পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। কাজেই যদি এমন কোন ব্যবস্থার কথা ভাবা যায় যাতে করে দেলোয়াররা পোশাক শিল্পে উৎপাদনের সুযোগ না পায় এবং একবার ঢুকে পড়লেও যেন সেখানে বহাল তবিয়তে থাকতে না পারে সেটা শ্রমিক, উদ্যোক্তা এবং সামগ্রিক ভাবে পোশাক শিল্পের জন্য মঙ্গল জনক হবে।
তবে রাজনৈতিক কর্মিদের প্রসঙ্গে এখানে বেশ জটিল একটি দ্বন্দ্ব আছে। বিষয়টা কিছুটা অপ্রিয় হলেও আলোচনায় আসা দরকার। যেমন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের বাম ধারার রাজনৈতিক কর্মিরা কাজ করছেন অনেকদিন ধরে। বলা যায় সমাজের বৃহত্তর অংশ যেখানে নিরবে শ্রমিকদের নিপীড়ন সহ্য করেন বামধারার রাজনৈতিক কর্মিরা এবং নেতারা সেখানে সমাজের হয়ে এই দরকারি কাজগুলোতে অংশ নিয়ে সমাজকে কিছুটা হলেও দায়মুক্ত করছেন। কিন্তু ঐ যে তাঁদের বামঘেষা পরিচয়! সেখান থেকে একটি দ্বন্দ্বের উৎপত্তি হয়। বাম রাজনীতির ধারনার দূরবর্তি লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমিকরা আন্দোলন করে মাধ্যমে সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করবেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত অধিকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি শ্রমিকদের যন্ত্রনার উপশম হতে থাকে তাহলে বিপ্লবের সম্ভাবনা কী সুদূর পরাহত হয়ে যাবে না? সামনের দিকে এগিয়ে যাবার যেই দীর্ঘমেয়াদি এবং শ্লথ প্রক্রিয়ার প্রস্তাবের সাথে মতাদর্শের একটি স্পষ্ট সংঘাত আছে। তাহলে এই যে প্রাতিষ্ঠানিক বা আইনগত পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে একটু একটু করে এগিয়ে যাবার যে কৌশল বাম রাজনীতিবিদরা তার পক্ষে কেন সমর্থন জানাবেন? নাকি স্বভাবতই তারা বোঝাতে চাইবেন যে, এই ধরনের কোন বোঝাপরা সম্ভব নয়? এই বিষয়টি আপাতত একটি খোলা প্রশ্ন আকারেই রাখছি।
এবারে প্রথাবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকান যাক। সম্প্রতি বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবার যেই পদ্ধতি তাতে নতুন করে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। সেটাকে এই আলোচনায় উহ্য রেখেও যদি দেখি তাহলে মনে হচ্ছে—শ্রমিক এবং মালিক উভয় পক্ষের স্বার্থ যদি একবিন্দুতে আনা যায় সে ধরনের সমাধানের পক্ষে কাজ করার বিষয়ে আওয়ামিলীগ বা বিএনপি উভয় দলেরই স্বার্থ জড়িত। কেননা ভোটে জিতে আসতে গেলে মালিক শ্রমিক দুই পক্ষ থেকেই বিভিন্ন ধরনের সমর্থন তাদের পেতে হয়। এমন অবস্থায় মালিক এবং শ্রমিক পক্ষকে একত্রে নিয়ে বসার যেই কাজটি তারা করতেই পারতেন। তাহলে তারা এটা করছেন না কেন? একটি সম্ভাবনা হল তারা এখনো বুঝতে পারেননি যে সবার লাভ হয় এমন একটা সমাধানেই পৌঁছানো সম্ভব। অথবা দলগুলোর রাজনৈতিক নেতারা চিন্তা ও কর্মে যথেষ্ট পরিশ্রমি নন। আরেকটি সম্ভাব্য কারণ সরকারি দল করছে না কারণ তাঁরা জানেন ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পুরোনো চল বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই ভোট দিয়ে শ্রমিকরা কিছুই পাল্টাতে পারবে না। কাজেই এত ঝক্কির দরকার কী? অন্যদিকে বিএনপিও হয়ত সেই কারনে উদ্যম হারিয়ে থাকতে পারে। অথবা “শ্রমিক স্বার্থ” নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হয়ত মালিকপক্ষের বিরাগ ভাজন হলে ক্ষমতায় যাবার পথে ও পরে সেটা তাদের জন্য ভাল হবে না এমন আশংকাও কাজ করতে পারে। কাজেই এখানে একটি গুরুতর সংকট হচ্ছে এই বিষয়ে কার্যকর সংলাপে সকল পক্ষকে নিয়ে বসার মত একটি গোষ্ঠীকে আমরা সনাক্ত করতে পারছি না।
তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কে কয়েকটি বিবেচনা
উৎপাদন একটু ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া, এটি স্বীকার না করে শিল্পন্নয়ন সম্পর্কে কোন আলোচনাই আগাতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে ঝুঁকির ধরন এই শিল্পের প্রথম দিককার মত নয়। আমরা একে শিশু শিল্প (infant industry) হিসাবে বিবেচনা করার ধাপ অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছি। সাফল্য এবং ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে পরিনত পর্যায়ে যখন শিল্প ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের প্রমিতকরণ (standardization) ঘটে। অভিজ্ঞতা থেকে শ্রমিক, মালিক এবং শিল্প নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীদের মধ্যে অনেক ধরনে জ্ঞানের বিস্তার ঘটে। তার কিছু এমন যেগুলো বর্ণনা ব্যাখ্যা করা যায় না। একজন শ্রমিককে কীভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে, কীভাবে তার দক্ষতা নিরূপণ করতে সম্ভব এমন নানা বিষয় অনেক অব্যক্ত জ্ঞান (tacit knowledge) এবং ব্যক্ত জ্ঞানের সমন্বয়ে শিল্প বিকাশ লাভ করে। পোশাক খাত যে এর ব্যতিক্রম নয় সেটাও নীশ্চিত ভাবে বলা যায়।
প্রমিতকরণের ফলে উৎপাদন এবং মুনাফায় ঝুঁকি কমে আসে। কিন্তু বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প এখন যেমন প্রতিষ্ঠিত একটি খাতে পরিনত হয়েছে তাতে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িদের ঝুঁকি আগের চাইতে অনেক কমে গেছে। অনুমান করছি তাঁদের একটি বড় অংশ আগাম অর্ডার নিয়ে উৎপাদনে নামেন। ফলে উৎপাদিত বাজারে চাহিদার ওঠা-নামা নিয়ে তাদের খুব ভাবতে হয় না। তাহলে এই যে শ্রমিকদের এতদিনের মজুরি অপরিশোধিত থেকে যাচ্ছে কেন? এখন আমরা যদি ধরে নেই মালিক পক্ষের কাছে সত্যিই টাকা নেই, তাহলে বলতে হবে তৈরি পোশাক উৎপাদনে এই মালিকপক্ষের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে এবং সেই দক্ষতার ঘাটতির কারনে যেই ক্ষতি সেটার দায় তারা শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, যেটা স্বভাবতই অন্যায্য। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার এই ধরনের উপায় অদক্ষ উৎপাদনকারীর পক্ষেই নেয়া সম্ভব। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে যেমন মালিকপক্ষ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা দানা বাঁধছে তেমনি একই সাথে এর ফলে দক্ষ এবং পেশাদার উদ্যোক্তারা এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেটাও বিবেচনায় আনা দরকার।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পে এই ধরনের অদক্ষ ও অপেশাদার উৎপাদনাকারির উৎপাদনের অধিকার কেন বলবত থাকবে? আর তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ অদক্ষ এবং অপেশাদার উদ্যোতাদের দায় যেমন অন্য উদ্যোক্তাদের উপর নিয়ে ফেলছেন তেমনি ব্যক্তি পর্যায়ে অদক্ষতার দায় গিয়ে চাপছে শ্রমিকদের উপর। এছাড়া শ্রমিকদেরকে জিম্মি করার অভিযোগও উঠেছে সেই নির্দিষ্ট গার্মেন্টস মালিকের উপর। এই অপবাদ ঘুরেফিরে পুরো উদ্যোক্তাগোষ্ঠীদের উপর যে পড়ছে না সেটাও বিজিএমইএ বলতে পারবে না। এতে করে সৎ, দক্ষ এবং পেশাদার ব্যবসায়িদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে না কি? ফলে পেশাদার উৎপাদনাকারীদের স্বার্থ বিবেচনা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বিজিএমইয়ের এগিয়ে আসা কেবল মাত্র ন্যায্যতার প্রশ্নই নয় এই শিল্পখাতের স্বার্থের জন্যই দরকার। প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষা পায় এমন কোন ব্যবস্থা কি ভাবা যায়?
বিমা ব্যবস্থা প্রণয়ন ও প্রয়োগের সম্ভাবনা
আপাতত এই পরিস্থিতি সম্পর্কে যেটুকু বাহ্যিক ভাবে জানা যাচ্ছে তাতে ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের বেতনভাতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিমা ব্যবস্থা করা গেলে সেখান থেকে এই সমস্যার টেকসই সমাধান হতে পারে। এই ব্যবস্থায় অধীনে একটি তহবিল তৈরি করা হবে যেতে পারে যাতে সব অনুমতিপ্রাপ্ত গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের অবদান থাকবে। সেটা হবে উৎপাদন বা পুঁজির কোন একটি ন্যায্য অনুপাতে। এটা ছাড়া কোন উদ্যোক্তা বিজিএমইয়ের সদস্য হতে পারবেন না। এছাড়া আরো কড়াকড়ি আরোপের জন্য যারা এতে অবদান রাখতে চাইবেন না তাদেরকে এই শিল্পে বিনিয়োগ এবং উৎপাদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার নিয়ম করা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও অন্তর্ভুক্ত করা গলে আইনগত ভাবে এটা নিশ্চিত করতে এবং এই বিষয়ক বিধি প্রণয়ন করতে সুবিধা হবে।
এখানে স্বভাবতই অনেক প্রশ্ন এসে যাবে। যেমন, উদ্যোক্তারা কেন এমন একটি তহবিলে টাকা জমা করতে রাজি হবেন? কি পরিমান অর্থ সেখানে জমা রাখতে হবে? কোন পেশাদার বিমা সংস্থা কি এতে আগ্রহী হবে, না কি বিজিএমইএ এটাকে সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে? প্রকৃত ঝুঁকি এবং উদ্যোক্তার দিক থেকে অবহেলার মধ্যে পার্থক্য কি করে বোঝা যাবে? ইত্যাদি আরো অনেক প্রশ্নই এখানে প্রাসংগিক। কিন্তু এই বিমা ব্যবস্থাটি যতি প্রাথমিক বিবেচনায় কার্যকর হতে পারে বলে মনে হয় তাহলে বাংলাদেশে এই বিষয়ক অনেক দক্ষ পেশাদার বিশ্লেষক পাওয়া যাবে বলে অনুমান করি যারা এই ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি কার্যকর কাঠামো বের করতে পারবেন।
যথেষ্ট সাবধানতা সত্ত্বেও শ্রমিকের মজুরি পরিশোধে ব্যর্থ হবার ঝুঁকি থেকে যায়। কাজেই নিজেদের গষ্ঠী স্বার্থেই এই ধরনের ব্যবস্থাপনায় গার্মেন্টস মালিকদের রাজি হবার সম্ভাবনা আছে। এখানে পেশাদারিত্ব যাতে পুরষ্কৃত হয় সে জন্য কিছু বিবেচনা আসতে হবে। যেমন বিমার মাধ্যমে কোন একজন উৎপাদনকারীর শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে তারপর সেই মালিককে এই খাতে উৎপাদক করতে দেয়া হবে কিনা না কি তাদের কালো তালিকা ভুক্ত করে তার উতপাদনের অধিকার রহিত করা হবে সেটা বিবেচনার জন্য উপযুক্ত বিধি প্রণয়ন করতে হবে। যেমন যদি উদ্যোক্তায় অবহেলা, অসাবধাননা বা অদক্ষতার জন্য যদি তারা সময় মত বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ না হন সেক্ষেত্রে এই বিমা তহবিল তারা কি শর্তে ব্যবহার করছেন সেটা বিবেচনায় আসতে পারে। যদি সেই উদ্যোক্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূল তহবিল থেকে অর্জিত অর্থ ফেরত দিতে পারেন তাহলে একধরনের বিবেচনা আর তাতে ব্যর্থ হলে আরেক ধরনের বিবেচনা আসবে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে দেউলিয়া ঘোষনা বা ব্যবসার অনুমতি বাতিলের মত ব্যবস্থা কার্যকর হতে পারে।
তবে ব্যতিক্রমও পারে। অর্থাৎ যদিও উপরের বিন্যাসটি দক্ষ এবং পেশাদার উৎপাদনকারিদের স্বার্থে ভাল তবুও বিজিএমইয়ে এতে রাজি না হতে পারে। কেন? এখানে দু’টি সম্ভাবনা মনে আসছে। প্রথমত, উৎপাদনের দলিয়করন। সাভারের বিপর্যয়ের প্রসঙ্গটিকে প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টায় এটা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। দ্বিতীয়ত, যদিও আমি ধরে নিয়েছি বিজিএমইএর সাংগঠনিক নেতৃত্বে যারা আছেন তারা এই খাতের দক্ষ এবং পেশাদার উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। বাস্তবতা তেমন নাও হতে পারে। হয়ত যারা অদক্ষ এবং অপেশাদার তারাই এই খাতের নেতৃত্বে আছেন। তেমনটা হওয়া বিচিত্র নয়। বাংলাদেশে অনেক পেশাজীবি সংগঠনই আজকে এই সমস্যায় আক্রান্ত। ব্যবসায়ি এবং দলিয় সমর্থকদের ক্রিয়াশীলতার এবং পেশাদারদের রাজনীতিবিমুখতার দরুন এই পরিস্থিতির উদ্ভব প্রায় প্রতিটি খাতকেই কলুষিত করেছে। বিজিএমইয়ের বেলাতে এই অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে দেখতে হবে পেশাদার এবং দক্ষ উদ্যোক্তাদের মতামত এবন বক্তব্যকে সামনে নিয়ে আসার কোন উপায় আছে কি না।
এই ব্যবস্থার সুবিধাগুলো কী?
তুবা গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির আন্দোলনকে একধাপ আগিয়ে সরকার এবং বিজিএমইএ-কে একসাথে বসে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় একটি বিমা ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং তাতে উপযুক্ত প্রণোদনা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে অপেশাদার উৎপাদককারিদের নিরুৎসাহিত করা অত্যন্ত দরকার। এতে করে কম করে হলেও বেশ কিছু সুবিধা হবে বলে অনুমান করা যায়:
– বেতন ভাতা সংক্রান্ত অবিচার থেকে শ্রমিকদের হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে।
– তৈরি পোশাক শিল্পে দক্ষতা এবং পেশাদারি আচরণ উৎসাহ পাবে। দীর্ঘমেয়াদে সেটা তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
– শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং অসন্তোষজনিত কারনে উৎপাদন বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা কমে যাবে। এটাও দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং অনিশ্চ্যতা কমাতে সহায়ক হবে।
– এই নজিরটি অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতগুলিকেউ একই ব্যবস্থা বিবেচনার বিষয়ে উৎসাহী করবে।
টেকসই ব্যবস্থা প্রবর্তনে কে বা কারা উদ্যোগ নেবেন?
কার্যকর বিমা ব্যবস্থায় শ্রমিক, মালিক এবং সরকার সবার স্বার্থই নিহিত থাকলে এমনি এমনিইতো এমন একটি ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে যাবার কথা ছিল। তেমনটা হয় নি কেন? এখানে আস্থার সংকট আছে এটা নিশ্চয়ই সবাই স্বিকার করবেন। ক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলোর পরস্পরের মধ্যে এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের নিজেদের ভেতরেও অনাস্থার আছে। কিন্তু যারা এই খাতগুলোকে দেখভাল করেন তাঁরা আন্তরিক হলে পক্ষগুলোকে রাজি করানো কঠিন হবার কথা নয়। আস্থার পরিবেশ তৈরি করে গোষ্ঠীগুলোকে তাঁদের স্বার্থ বিচার বিশ্লেষণের সুযোগ দিতে হবে। টেকসই কিছু পেতে গেলে সেটাকে সময়, ধৈর্য এবং শ্রমসাপেক্ষ প্রক্রিয়া ধরে নিয়েই আগাতে হবে। শ্রমিক অধিকার প্রসঙ্গে উদ্যোক্তাদেরকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখতেই আমরা অভ্যস্ত। এর কিছু যৌক্তিক কারণও নিশ্চয়ই আছে। এছাড়া রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রভাব, বাজার ব্যবস্থার প্রতি বিরাগ ও একই সাথে উদ্যোক্তাদের দিক থেকে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব- সব মিলিয়ে হয়ত এটা হয়েছে। সফল হোক বা না হোক সহযোগিতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব কি না তা যাচাই করে দেখা যায় কি? বিশেষ করে রাজনৈতিক ভাবে যাঁদের গ্রহনযোগ্যতা আছে তাঁরা একত্র হয়ে যদি বিষয়টি নিয়ে বসেন কেমন হয়?
কৃতজ্ঞতা: তুবা গার্মেণ্টস প্রসঙ্গে লিখতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ (স্যার)-এর উৎসাহ দেবার সূত্র ধরে এই লেখা, সে জন্য স্যারকে ধন্যবাদ।
৫ আগস্ট, ২০১৪
তুবা গার্মেন্টস সমস্যার একটা বড় প্রশ্ন আমাদের নাগরিক আলচনায় আনুপস্থিত। সেটা হচ্ছে শেষ কয়েক মাসে কারখানার বেতন দেয়ার সক্ষমতাটা কি ছিল?
কমপ্লায়েন্স যখন সবার মুখে মুখে তখন তাযরিন কুখ্যাত তুবার পাচ কারখানার পর্যাপ্ত কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা সিমিত হবার কথা। আবার এই প্রতিযগিতার বাজারে একটা আংশিক চালু করখানার পক্ষে মজুরি দেওয়া কষ্টসাদ্ধ হবার কথা। তার উপর মালিক মহাদয় ছিলেন জেলে।
এই অবস্থায় কারখানার মজুরি দেয়ার সক্ষমতা না থাকারি কথা। সমস্যার টেকসই সমাধানে নাগরিক আলচনায় এই বিষয়টা ও আসা উচিত।
একটা লিমিটেড লায়াবিলিটি কম্পানি উন্নত রাষ্ট্রে এই পরিস্থিতিতে দেউলিয়া আইনের আয়তায় আসার কথা বা কম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনাদারদের দায় মেটানর কথা। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এখানে একটা ট্রেড বডি (BGMEA) মজুরির ব্যেবস্থা করেছে। আমার বিশ্বাস এই দুনিয়াই এই উদাহরন বিরল।
মজুরি বিমা প্রসঙ্গেঃ যেহেতু প্রস্তাব টা এক ধরনের বিমা সেবা নিশ্চিই এই সেবা টা আসতে হবে একটা বিমা প্রতিষ্ঠান থেকে। সুতরাং প্রশ্ন টা এটা না যে ব্যাবসায়িরা এই খাতে টাকা রাখতে রাজি হবে কি না, মুল প্রশ্ন হল বিমা প্রতিষ্ঠান কি এই ধরনের সেবা প্রস্তাব করার ঝুকি নেবে কি না। আমার অভিজ্ঞতায় ফ্যাক্টরির পক্ষে সময় মত বেতন না দিতে পারার কারন দার করান একটা সহজ কাজ। অতএব এই বিমার ঝুকি হবে মাত্রাতিরিক্ত বেশি। সুতরাং কোন বিমা প্রতিষ্ঠানই এই বিমা সেবা বাজারে ছারবে না।
প্রসঙ্গত উল্যেক্ষ যে এই দুনিয়ায় বিমার ক্রেতা হয় কোন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান নয়ত কোন ব্যাক্তি। এই প্রস্তাবে এই বিমার ক্রেতা হতে হবে একটা শিল্পের সকল সদস্যের। এই অভনবত্যর পলিটিকাল ইকনমি বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
চমৎকার দু’টি মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসিব ভাই। আপনি যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হওয়া উচিত। আপনার মন্তব্য দু’টির তিনটি প্রধান বিবেচ্য যেগুলো আবার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বিষয়গুলো যথাক্রমে – দেলোয়ারের কারখানায় যথেষ্ট অর্ডার না থাকায় মজুরি পরিশোধে অক্ষমতা, দেউলিয়া আইনের প্রয়োগ প্রসঙ্গ এবং মজুরি বিমায় মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে।
বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রে কোন চলকটি আদতে কি অবস্থায় আছে সে প্রশ্নটি ইম্পিরিকাল এবং সে সম্পর্কে আমার চাইতে আপনি অনেক ভাল জানবেন। তবে বাইরে থেকে দেখেশুনে আমার ব্যাখ্যাকে আমি তিনটি ভাগে ভাগ করে বলব।
প্রথমত, অভিনবত্বের রাজনৈতিক অর্থনীতি প্রসঙ্গ: যেখানে একটি অভিনব প্রস্তাব এসেছে সেখানে যৌক্তিক ভাবে কিছু অভিনব/বিশিষ্ট বাস্তবতাও থাকার কথা যেখান থেকে এই প্রস্তাবের ধারনাটি তৈরি হয়েছে। ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে এই ইম্পিরিকাল শুন্যতা আপনার মন্তব্য থেকেই অনেকটা পুরণ হচ্ছে যখন আপনি বলছেন “একটা ট্রেড বডি (BGMEA) মজুরির ব্যেবস্থা করেছে। আমার বিশ্বাস এই দুনিয়াই এই উদাহরন বিরল” – এই ঘটনাটি কেন ঘটেছে সে সম্পর্কে একাধিক সম্ভাবনার মধ্যে আমার আপাতত যেটা মনে হচ্ছে, তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা বিশ্ব পরিমন্ডলে শ্রমিকের শোসক হিসাবে যাতে পরিচিত না হন সেটা নিশ্চিত করার বিষয়ে মরিয়া। আর সেটা করতে গিয়ে তাদের সংগঠন বিজিএমইএ যখন দুষ্টের পালন করছে তাতেও তারা শক্ত কোন প্রতিবাদ করে নি। ফলে শ্রমিকদের শোসন বন্ধ করার বিষয়ে কোন কার্যকর এবং দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়া হলে তাতে মালিকদের সম্মিলিত গোষ্ঠী এতে রাজি হবার একটা জোরালো সম্ভাবনা এখানে দেখা যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, যদি আমার লেখতে স্পষ্ট নাও হয়ে থাকে তবু দেউলিয়া আইনের প্রয়োগ প্রসঙ্গে আমার ভাবনা ছিল এমন যে সেটা মজুরি বিমার সাথে মিলিয়ে দেখা হবে। অর্থাৎ যেই সংগঠন (আপনার প্রস্তাব অনুসারে কোন পেশাদার বিমা প্রতিষ্ঠান) এটার ব্যবস্থাপনা করবে তারা সংকটের মুহূর্তে প্রথমে তাদের তালিকা ভুক্ত কোন কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ভাতা সংক্রান্ত সংকট দ্রুত সমাধান করে দেবে। এরপর তারা নিয়ম মেনে পেশাদারি পদ্ধতি মেনে বিষয়টির চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে। বিশদে না ঢুকেই বলা যায় এক্ষেত্রে যে ফলাফল আসতে পারে – মালিকের অদক্ষতা জনিত কারন, একান্তই দৈব কোন কারণ যার উপর সঙ্গত ভাবেই মালিকের কোন নিয়ন্ত্রন ছিল না, অথবা এটা নেহাত কোন টাইমল্যাগের বিষয় (যেমন মালিকের সাময়িক তারল্য সংকট)। প্রথমটি হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিমা কোমপানির পাওনা পরিশোধ না করলে বিমা কোম্পালি দেউলিয়া আইন প্রয়োগ করে মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল (এ ধরনের ব্যবস্থা সম্ভবত শ্রমিকদের পক্ষে নেয়া কঠিন)। দ্বিতীয়টি হলে মজুরি বিমার যে বিধান তৈরি হবে সেটা মেনে বিমা কোম্পানি ভার বহন করবে। ঝুকি ব্যবস্থাপনাই তো তাদের কাজ!! তৃতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ টাইম্ল্যাগের বেলাতে মালিক কিছু জরিমানা গুনে বিমা কোম্পানিকে পাওনা পরিশোধ করে দেবে।
তৃতীয়ত, ঝুকি প্রসঙ্গে আপনি যেটা বললেন সেটা নিয়ে আমার ভাবনা হচ্ছে – তুবা প্রসঙ্গে মিডিয়া এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা যেই হট্টগোল শুনলাম সেটার ভিত্তিকে অনুমান করা যায় বিজিএমইয়ের ৫১৫০ সদস্য কারখানার (সূত্রঃ http://www.bgmea.com.bd/home/about) বাকিগুলোতে সম্ভবত শ্রমিকরা ঠিকভাবে মজুরি পাচ্ছেন। তার মানে দাড়াচ্ছে একটা বিচ্ছিন সময়ে এই যে ব্যতিক্রম সেটা এই খাতের খুব অল্প অংশের উপর প্রযোজ্য। তবে এই মজুরি অনিশ্চয়তার সাথে আরো অনেক সিনারিও যোগ করা যায় যেমন তাজরীন সিনারিও, রানা প্লাজা সিনারিও – যেখানে নিয়ম সিদ্ধ ভাবেই বিমা কিছু ব্যয় নির্বাহ করত। এবং শুধু তাই নয় – বিমা প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিমা কিছু ক্ষেত্রে কারখানা গুলোর কমপ্লায়েন্স ঠিক রাখার বিষয়েও আরেকটি স্বার্থ গোষ্ঠী হিসাবে গড়ে উঠত। সেটা একই সাথে শ্রমিক এবং মালিক পক্ষ দুইয়ের জন্যই উপকারি হত। ফলে প্রশ্ন হচ্ছে আসলে ঝুঁকি বেশি কী কারনে? যেহেতু মজুরি দিতে না পারার সাথে দেউলিয়া হবার এবং পুরো শিল্পের বাকি সদস্যদের চাপ নেবার একটা বিষয় আছে ফলে কম্পলায়েন্স, শ্রমিক স্বার্থ এবং মালিকদের স্বার্থতো একই বিন্দুতে আসার কথা। কার্যত ৫১৪৯ টি কারখানা যেখানে ঠিকভাবে মজুরি দিচ্ছে সেখানে একজনের অদক্ষতার দায় কেন তারা নেবে, যেখানে বিমার মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ আছে? আর অদক্ষতার প্রসঙ্গটি আমি পোস্টে উল্লেখ করেছি দেলোয়ারের মজুরি দেবার অক্ষমতার সম্ভাবনা মনে রেখে। রাজনীতিকরা যদিও বলছিলেন তার কাছে টাকা আছে তবু এমন হওয়াটা বিচিত্র নয় যে টাকা তার কাছে ছিল না। এটাকে একটা সম্ভাবনা হিসাবে বিবেচনায় রেখেছিলাম। আর এই বিমা ব্যবস্থা প্রবর্তন হলে তখন অর্ডার না থাকলে শ্রমিকদের কাজে রাখার বিষয়ে কী রীতি অনুসরণ করা হবে সেটাও স্ট্যান্ডার্ডাইজড হবার একটা সুযোগ তৈরি হবে বলে অনুমান করি। যাক অনেক অনুমান করে ফেললাম।
রিয়াজ ভাইঃ মজুরি বিমা-ও কিন্তু দুনিয়াতে একটা নতুন ভাবনা। বিমা যেহেতু ঝুকি বাচান ব্যাবসা, নতুন এর প্রতি তার আগ্রহ কম হওয়ার কথা। মনে রাখতে হবে পোশাক খাতে মজুরির পরিমান মাসে চার হাজার কটি টাকার কম না ( ৫০ লাখ গুন আট হাজার )। এই বিশাল টাকার একটা খুদ্র ভগ্নাংশ আমাদের বিমা খাত। সতরাং তা্রা এই বিশাল খাতের মজুরি বিমা সেবা দিতে সক্ষম কি না তা ভাবার বিষয়। বিমা খাতের একজন পেশাদার এর মতামত নিলে ভাল ধারনা পাওয়া যাবে। একটা কথা অবশ্য বলতে পারি যে আমরা যারা মধ্যম সারির ফ্যাক্টরি তারা এই বিমা বাজারে থাকলে লুফে নিব কারন যারা বড় তারা বেশি প্রিমিয়াম দিবে আর তাদের দেউলিয়া হবার সম্ভাবনা কম।
প্রসঙ্গত আজকের Dhaka Tribune এর মতে গত এক বছরে ২০৯ টা ফ্যাক্টরি বিভিন্ন কারনে বন্ধ হয়েছে। চিকরি হারিয়েছে ১ লাখ বিশ হাজার শ্রমিক। অন্য খবর হচ্ছে বিদেশ থেকে আসা মজুরি এই বছর কমেছে বিশ ভাগের বেশি। দুইটা খবরি দেশের জন্য বিপদজনক।
তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য হাসিব ভাই। মজুরি বিমা “নতুন ভাবনা” যখন বলছিলেন তার সাথে ঝুঁকির সম্পর্কটিকে অন্যভাবে দেখছিলাম। এবারের মন্তব্য থেকে বুঝলাম আপনি বিমা প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি মূল্যানের “নতুন” এর প্রভাব হিসাবে দেখছেন। আর এই বিমা ব্যবস্থায় বিশালত্বের প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন আলোতে বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুযোগ হয়েছে। সেগুলো উল্লেখ করি:
প্রথমত: প্রতিটি বিষয়ই কোন না কোন সময় একবার অন্তত: “প্রথমবার” হয়েছে। সেটা নিশ্চয়ই বিমার বেলাতেও সত্য। তবে এ বিষয়ে দ্বিমত নেই যে ‘প্রথমবার’ হলে সতর্ক বিচার বিশ্লেষণ করা বেশি দরকার হয়ে পড়ে। ফলে আপনার মন্তব্যগুলো এই আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ববহ।
দ্বিতীয়ত: এই বিমার পরিসরগত যে বিষয়টি উল্লেখ করছেন সেটাও ভাবনার বিষয়। এটাকে আমলে নিয়ে নতুন দু’টি বিবেচনা মনে আসল। জানিনা আপনার যৌক্তিক মনে হবে কিনা। – এক, সম্ভবত মজুরি বিমার মত বড় একটি ইন্সট্রুমেন্টের বেলা কার্যত মজুরি বিমাই দেখবে তা নয় — এর সাথে অনিশ্চয়তার আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সাধারণভাবে বলা হয়, প্রতিষ্ঠান বা নতুন ইন্সট্রুমেন্টের কাজ হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অনিশ্চয়তা কমানো। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিক গোষ্ঠীর মধ্যে সামগ্রিক ভাবে অনিশ্চয়তা হ্রাসের তীব্র ইচ্ছা আছে বলে আমি অনুমান করি। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিশ্ব অর্থনৈতিক সমিতির পরিচালিত কম্পিটিটিভনেস রিপোর্টের কিছু প্রাপ্তি বিবেচনা করে অনুমান করি তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কমানোর জন্য প্রয়োজনে অর্থ ব্যায়ের যে ইচ্ছা আছে (যেটাকে অর্থনীতিবিদরা willingness to pay বলেন) সেটাকে ঠিক ভাবে কাজে লাগানোয় ব্যর্থতাকে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা সম্ভবত সরকারের ওপর কিছুটা অসন্তুষ্ট। এর আরো কিছু কারণ আছে হয়ত। আমার এই বক্তব্য বাহ্যিক অনুমান মাত্র। তবে মজুরি বিমার যেই ভাবনার প্রস্তাব এই লেখায় রেখেছি এটাকে অনিশ্চয়তার আরো কিছু বাড়তি বিষয়সমেত বিবেচনায় আনা যেতে পারে। রানা প্লাজা সিনারিও, তাজরীন সিনারিও নিয়ে কথা বলার সময় সে বিষয়গুলোই ভাবছিলাম। অর্থাৎ দৃশ্যত মশা মারতে কামান দাগানো হচ্ছে মনে হলেও, মজুরি অনিশ্চয়তা ছাড়াও আরো কিছু অনিশ্চয়তা দূর করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে যেগুলো সামষ্টিক ব্যবস্থায় মাধ্যমে (industry wide measure) সমাধান করা সম্ভব হতে পারে।
তৃতীয়ত: ছোট মাঝারি এবং বড় উদ্যোক্তাদের প্রসঙ্গে — বিমায় যে উদ্যোক্তাকে নিরাপত্তা দেয়া হবে সে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা একটা গুরুত্বপুর্ণ বিবেচ্য বিষয় হয়। সেক্ষেত্রে আকার এবং ঝুকি এই দুইটি নিয়ামকই প্রিমিয়াম নির্ধারণে বিবেচনায় আসবে। ফলে বড় হলেই প্রিমিয়াম যে পুরোপুরি আনুপাতিক হবে তেমনও নয়। তবে স্বাভাবিক ভাবেই (by design) – যাদের দেলোয়ারের মত ট্র্যাক রেকর্ড আছে তাদের প্রাক্কলিত ঝুঁকির বেশি হবে। সবমিলিয়ে সেটা অন্য একটি আলোচনা এবং বিমা বিষয়ক প্রচলিত রীতি অনুসরণ করে তার অনেক কিছু ঠিক করা যাবে হয়ত। তবে উপরে তথ্যভাণ্ডার তৈরির যে প্রসঙ্গটি আলোচনা করেছি সেটা এই ক্ষেত্রে বাড়তি তাৎপর্য পেতে পারে — কেন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রথমে দরকার ঝুঁকির প্রাক্কলন আর সে জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য ও উপাত্ত বেশ দরকারি।
চতুর্থত: আপনি যেটা বললেন,
— সেটা উপরের দুই নম্বর পয়েন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট। বিশেষ করে তৈরি তৈরি পোশাক সংক্রান্ত অংশটি। আমার মনে হচ্ছে এখানে জোরালো রাষ্ট্রীয় ভূমিকা রাখার সময় এসে গেছে। এছাড়া সামষ্টিক পর্যায়ে তাৎক্ষনিক সমাধানের পাশাপাশি টেকসই ব্যবস্থাগুলোকে খুঁজে বের করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আর ইন্ড্রাস্ট্রি ওয়াইড কিছু আশু ব্যবস্থা না হলে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিপদে পড়তে পারে।
ঝুঁকি কমানর ব্যয়ভার একটা ব্যাবসা নিতে আগ্রহি হবে কথাটা সত্যি কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে “industry image” রক্ষার্থে সে কতটুকু চাঁদা দিতে রাজি থাকবে এবং সবার মিলিত চাঁদা কি সব বিপদগ্রস্থ কারখানার মজুরির ব্যায়ভার বহন করতে পারবে কি না। আমার মতে বিপদগ্রস্থ কারখানার সংখা খুব কম হলে এবং চাঁদার পরিমান কম হলে এই চাঁদা কাজে লাগতে পারে।
বিষয়টা আরেক ভাবে দেখতে গ্যালে, প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক নিয়মে, দুর্বল সদস্য বাজার থেকে ঝোড়ে পরবে, আর যদি বাজারে চাহিদা থাকে তবে নতুন এবং উন্নত প্রতিযোগী আসবে। এই সম্ভাবনা অমুলক না যে মজুরি বিমা কিছু ঝোড়ে পরা প্রার্থীদের স্বাভাবিক মৃত্যুকে দেরি করানর কাজে ব্যবহার হবে, যা সমাজের জন্য হবে একটা অপচয় এবং মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের প্রতিযোগী পরিবেশের জন্য অস্বাস্থ্যকর।
আমাদের বর্তমান আইনে মজুরি মেটানর যে সমস্যা আমি দেখি তা হচ্ছে কারখানা বন্ধের বিধানে আছে যে কারখানা বন্ধ করতে হলে কারখানা মালিককে তিন মাসের মজুরি দিতে হবে। আইনটা অদ্ভুত কারন কারখানা বন্ধ হয় তখনি যখন এক মাসের মজুরি দেবার ক্ষমতা কারখানার থাকে না। তাই মালিকরা গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় চম্পট। তার সম্পত্তি তারি থেকে যায়। ব্যাঙ্ক করে মামলা, আর তা যায় ঝুলে। নিষ্পত্তি যখন হয় তখন মজুরের পাওনার কথা ঐ গেটের তালা ছারা আর কার মনে থাকে না।
এই ক্ষেত্রে কারখানার সম্পত্তি বিক্রি করে দেনা মেটানর কথা। প্রচলিত আইনে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির প্রথম দাবিদার হচ্ছে পাওনাদার রা, ব্যঙ্ক দিয়ে যার শুরু। মজুরদের দাবি সর্বশেষ দাবিদার মালিকদের ঠিক আগে।
আমার মতে নাগরিক আলোচনায় এই আইনি সংশধন এর দাবি আশা উচিত যে দিউলিয়া অবস্থায় কারখানার সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনাদারদের দেনা মেটানর বিধানে পাওনাদারদের তালিকাতে মজুরদের নাম প্রথমে থাকতে হবে।
উত্তর দিতে কিছুটা দেরি হল বলে দুঃখিত।
কেন কারখানা মালিক বিমা ব্যবস্থায় টাকা দিতে রাজি হবে? ইন্ডাস্ট্রি ইমেজ বাড়বে বলে তারা তা দিবে এমন নয়, তারা তাদের নিজেদের ঝূঁকি হ্রাসের কথা ভেবেই কাজটা করবে। ইণ্ডাস্ট্রি ইমেজের সুরক্ষা হবে অনিশ্চয়তা হ্রাসের কারনে। এটা ফলাফল হিসাবে আসবে শুধু তাই নয়, শিল্পে প্রনোদনা ব্যবস্থার যেই পূনর্বিন্যাস হবে তাতে করে দক্ষ উদ্যোগ অনুপ্রানিত হবে বলে আমার মনে হয়। কেননা কোন ব্যবসায়ি এই বিমার মাধ্যমে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করলে সেটা তার জন্য যেন একটা অদক্ষতা বা অক্ষমতার প্রতীক হয়ে উঠে, অথবা তার ক্রেডিট রেটিং এ যেন কাল দাগ পরে তা বিমার নিয়ম কানুন নির্ধারন করার বেলাতে নিশ্চিত করতে হবে। আর সেটা বোধ হয় সম্ভব। এখানে মূলত গুরুত্বপুর্ণ বিষয় ব্যক্তিপর্যায়ে কারখানা মালিক, শ্রমিকদের যে চাওয়া-পাওয়া সেগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে সবার সামগ্রিক (industry wide) প্রণোদনা ব্যবস্থা তৈরি। এই মূলনীতি সফল করার জন্য সাধারণত রাষ্ট্রের ভূমিকা রাখার কথা। তবে এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা না থাকলেও কিছুটা সাব-অপটিমাল সমাধান (sub-optimal solution) শিল্পমালিক এবং শ্রমিকদের আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। তবে যদি এক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদ এবং বিমা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং রাষ্ট্রের অংশগ্রহনে অনেক বেশি কার্যকর ব্যবস্থা প্রণয়ন করা যাবে বলে আমার মনে হয়। এখানে কী কী বিষয়ের উপর প্রভাব পড়ছে সেটা ভাবতে গেলে আমরা পাচ্ছি — শিল্পখাতের সামগ্রিক স্বার্থ এবং ভাবমূর্তি, শ্রমিক স্বার্থ, সামাজিক ন্যায্যতা বিষয়ে নাগরিক মনোভাব, রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা ইত্যাদি।
আপনি বলেছেন, “আমার মতে বিপদগ্রস্থ কারখানার সংখা খুব কম হলে এবং চাঁদার পরিমান কম হলে এই চাঁদা কাজে লাগতে পারে” — এটার সাথে আমি একমত। দৃশ্যত আমার মনে হচ্ছে বিপদগ্রস্ত কারখানার সংখ্যা কমই হবে, আর বর্তমানে এই খাতটির আকার যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে মাথাপিছু চাদার পরিমানও বেশি হবে না বলে আশা করি। তবে প্রথম একটি মন্তব্যে যেমন আশংকা প্রকাশ করেছেন, অর্থাৎ কারখানা মালিকরা বেতন না দেবার নানা অজুহাত হাজির করতে সক্ষম — সে ক্ষেত্রে স্কিম ডিজাইনের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে বেতন দিতে দেরি হলেই তাৎক্ষনিক বিমা কোম্পানী ব্যবস্থা নেবে আর সেই ব্যবস্থা নিলেই মালিকের বিরুদ্ধে কঠিন নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তখন নৈতিক বিপর্যয় (moral hazard) প্রমানিত হলে মালিককে চড়া মূল্য দিতে হবে। এতে করে কারখানা মালিকরা একান্ত বাধ্য না হলে বিমা কোম্পানির সাহায্য তলব করবে না, আবার শ্রমিকের বেতনও সময় মত দেবার চেষ্টা করবে।
কারখানা বন্ধের সম্পর্কে যেটা বললেন সেটার সাথেও দ্বিমত নেই। এই বিষয়টিকে নতুন করে ভাবার সুযোগ আছে। মজুরির দাবি পুরনের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে যেটি বলেছেন তাও ঠিক। অনেক ধন্যবাদ, ধৈর্য ধরে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য।