সিরিয়ায় রাশিয়ার বোমা বর্ষনের একাদশ দিবসে রণাঙ্গনে তার প্রতিক্রিয়া লক্ষিত হতে শুরু করেছে – সরকারী বাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে খানিকটা অগ্রগ্রতি অর্জন করেছে এবং তাঁদের হারানো জমির খানিকটা পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গত কয়েক মাসে বিদ্রোহীরা যে সাফল্য অর্জন করেছিলো সেটি পালটে দেয়াই হচ্ছে সিরিয় বাহিনীর আশু লক্ষ্য ।রুশ বোমাবর্ষনের কারনে তাঁদের পক্ষে এই অভিযান চালানো সম্ভবপর হয়েছে। আইসিস নির্মূল এবং বিদ্রোহীদের ধ্বংস সাধন করার কথা বলে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় বোমা বর্ষন করছে। এই যুদ্ধে রুশদের প্রধান লক্ষ্য কি সেটা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার বলেছেন, তবে সবচেয়ে সুস্পষ্ট করে বলেছেন রোববার রুশ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাতকারে। তিনি বলেছেন যে, মস্কোর লক্ষ্য হচ্ছে সিরিয়ার সরকারকে স্থিতিশীল করা এবং রাজনৈতিক সমাধানের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা। তার এই বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া দরকার যে কারনে যে এই বক্তব্য দেয়া হলো সেই সময়ে যখন রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে তার পুরনো প্রতিপক্ষ সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। রোববার পুতিন সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে সোচি’তে বৈঠক করেছেন। পুতিন আবু ধাবি’র ক্রাউন প্রিন্স জায়েদ আল নাহিয়যানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এদিকে মার্কিন নেটওয়ার্ক টেলিভিশন সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র একটি সাক্ষাতকার রোববার দিনের আরো পরের দিকে প্রচারিত হবে। সেখানে তিনি বলছেন যে, রাশিয়ার এই অভিযান তার শক্তি নয়, দুর্বলতার প্রকাশ।
গত কয়েকদিনে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্যে আমার কতগুলো মানচিত্রের দিকে তাকাতে পারি।
মানচিত্র ১: কার নিয়ন্ত্রনে কোন এলাকা। এই মানচিত্রটি ৮ আগস্ট ২০১৫-এর।মানচিত্র ২/ কার নিয়ন্ত্রনে কোন এলাকা, কার্টার সেন্টারের দেয়া মানচিত্র / হলুদ চিহ্নিত এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে, লাল চিহ্নিত এলাকা আইসিসের দখলে, সবুজ কুর্দিদের দখলে, নীল সরকারী নিয়ন্ত্রনেমানচিত্র ৩/ ৭-৮ অক্টোবর তারিখে রাশিয়ার বোমা বর্ষনের এলাকা মানচিত্র ৪/ বিমান হামলার গোড়ার দিকে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র কোথায় বোমা নিক্ষেপ করেছেমানচিত্র ৫ – রোববার ১১ অক্টোবর রণাঙ্গনে সিরীয় বাহীনির অভিযানের মানচিত্র. হলুদ চিহ্নিত এলাকা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রনে, নীল চিহ্নিত এলাকা সরকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে, বোমা বর্ষনের চিহ্ন রাশিয়ার বোমা বর্ষন, সরকারি বাহিনীর অগ্রগতি তীর চিহ্নিত।
আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক । তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিইচ-ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেওয়ার আগে অধ্যাপক রীয়াজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বৃটেনের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্ল্যাফলিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। এ ছাড়া তিনি লন্ডনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। ইংরেজিতে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দশটি। এর মধ্যে রয়েছে– ‘পলিটিক্যাল ইসলাম এন্ড গভর্নেন্স ইন বাংলাদেশ’ (২০১০), ‘ফেইথফুল এডুকেশন : মাদ্রাসাজ ইন সাউথ এশিয়া’ (২০০৮) এবং ‘গড উইলিং – দি পলিটিক্স অব ইসলামিজম ইন বাংলাদেশ’ (২০০৪)। বাংলা ভাষায়ও তাঁর অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ‘স্টাডিজ অন এশিয়া’ জার্নালের সম্পাদক। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ইসলাম বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর স্বীকৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি ২০১২ সালে ডক্টর রীয়াজকে ‘ইউনিভার্সিটি প্রফেসর’ পদে ভূষিত করে। ২০১৩ সালে তিনি ওয়াশিংটনে উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারস-এ পাবলিক পলিসি স্কলার হিসেবে কাজ করেন।
View all posts by আলী রীয়াজ