November 23, 2024

সদ্য বিদায়ী ২০১৬ সালকে যদি একবাক্যে বর্ণনা করতে হয় তবে তা হবে ‘পরিবর্তনের বছর’। বৈশ্বিক রাজনীতির ঘটনা প্রবাহকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা এই বছরটিকে বিস্ময়, বিভক্তি এবং অনিশ্চয়তার বছর বলেও চিহ্নিত করতে পারি। অনস্বীকার্য যে, বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিভক্তি ও বৈষম্য নতুন নয়, সব দেশে ও সমাজেই সব সময়ে বিভক্তি থেকেছে। কিন্ত এতটা প্রকট রূপে এবং রাজনীতিতে নির্ধারকের ভূমিকায় তার উপস্থিতি আমরা আগে দেখতে পাইনি। বিস্ময় এবং অনিশ্চয়তা ২০১৬ সালে সারা বছর ধরেই আমাদের সঙ্গী থেকেছে, কিন্ত তার আর কতটা আর বাকি তা আমরা জানিনা। তাই অন্ততপক্ষে ‘অনিশ্চয়তা’র বিষয়টি ২০১৭ সালের জন্যে তুলেও রাখা যাতে পারে। ২০১৬ সালে যে ঘটনা প্রবাহ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, যে সব রাজনীতিবিদ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন, যে সব প্রবণতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেগুলো আশু ভবিষ্যতে সারা পৃথিবী জুড়ে এক অনিশ্চিত সময়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০১৭ সালের দ্বারপ্ত্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা বলতেই পারি যে, অনিশ্চয়তাই এখন একমাত্র নিশ্চিত বিষয়। স্থিতাবস্থা সব সময়ই ইতিবাচক নয়, অনেকে ক্ষেত্রেই স্থিতাবস্থার অবসানই কাঙ্ক্ষিত; তেমনি পরিবর্তন মানেই অগ্রগতি নয়, পরিবর্তন মাত্রই ইতিবাচক নয় সেটাও আমাদের মনে রাখা দরকার; পশ্চাদগামী যাত্রাও পরিবর্তন, কিন্ত তা অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত।
বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ব্রেক্সিট, যুক্ত্ররাষ্ট্রের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়, ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট দুতের্তের উত্থান, কলোম্বিয়ায় গণভোটে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি প্রত্যাখান, তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান, কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কন্নোয়ন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আসাদ সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য, ব্রাজিলে রাষ্ট্রপ্রধান ডিলমা রুসফ’র ক্ষমতাচ্যুতি, দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হি’র ইম্পিচমেন্ট, ভেনেজুয়েলার অব্যাহত রাজনৈতিক সংকট কেবল ক্ষেত্রবিশেষে বিস্ময়ের কারণই হয়নি, এরচেয়েও বেশি কিছুর দিকেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষন করেছে। এসবের মধ্যেই আছে পরিবর্তনের লক্ষণ এবং অধিকতর পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থা ও অবস্থান যে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী সেটা তালিকার অনেক ঘটনার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্রিমিয়া দখলের মধ্যে দিয়ে পুতিন জানিয়েছিলেন যে সামরিক শক্তি ব্যবহারে তিনি অনীহ নন, সিরিয়াতে আসাদ সরকার রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়ে তিনি রাশিয়ার আগ্রাসী ধরণের নতুন ভূমিকার জানান দিয়েছেন। রাশিয়া যে তার প্রভাব ও শক্তির প্রয়োগ কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যেই সীমিত রাখবেনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় তাই প্রমাণিত। রাশিয়ার এই চেষ্টার কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার ক্রমাবনতিশীল সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যা ডিসেম্বরে রাশিয়ার ওপরে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং রাশিয়ার ৩৫ জন কূটনীতিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তেই স্পষ্ট। বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব যে আগের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে তাও আমরা উপলব্ধি করতে পারি। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ২০১৬ সালে সহজে অনুধাবন করা গেছে।
এই বছরে আমরা আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে এক ধরণের নতুন বিন্যাসও দেখেছি – মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সিরিয়া-রাশিয়ার মধ্যেকার ঘনিষ্ঠতা নতুন নয়, কিন্ত তার সঙ্গে তুরস্কের সংযুক্তির যে আভাস বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যায় তাতে নিঃসন্দেহে ঐ অঞ্চলে নতুন মেরুকরণের এবং সহযোগিতা কাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বা আশঙ্কার ইঙ্গিত আছে। এর বিপরীতে সৌদি আরবের যুদ্ধংদেহী মনোভাব এবং ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা বিবেচনায় নিলে আরো বেশি অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের ছবিই ভেসে ওঠে। এই অঞ্চলে পরিবর্তনের আরেক ইঙ্গিত হচ্ছে ইসরাইলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির বদল। গত কয়েক দশক ধরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরাইলের বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোনো রকম নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে, কিন্ত ২৩ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকলে নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয় এবং এই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ক্ষমতায় এলে ইসরাইলের পক্ষেই তাঁর প্রশাসন অবস্থান নেবে, রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসও ওবামা প্রশাসনের অবস্থানের বিরুদ্ধে, এই প্রস্তাবের আশু কার্যকারিতা না থাকলেও এর প্রভাব যে আগামীতে থাকবে সেটা প্রায় নিশ্চিত। পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব বিস্তার রোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে ওবামা প্রশাসন যে ‘এশিয়া পিভট’-এর উদযোগ নিয়েছিলো তার একটি অন্যতম লক্ষ্য ছিলো ক্রমাগতভাবে অর্থনৈতিকভাবে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও বানিজ্য বৃদ্ধি। কিন্ত ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি বাস্তবায়িত হবার আগেই তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষনার ফলে সেই প্রচেষ্টা এখন বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনা নেই। এতে করে অনুমান করা যায় যে, অর্থনৈতিকভাবে চীনের প্রভাব বলয়ের বিস্তৃতির পথ উন্মুক্ত হবে; চীন এবং ফিলিপাইনের সম্পর্কের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন সেই দিকেই অঙ্গুলি সংকেত করে। এর একটি অনিবার্য পরিণতি হবে দক্ষিন চীন সাগরে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি। ২০১৬ সালে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে দক্ষিন এশিয়ায়, যার প্রভাব আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলেই অনুমান করা যায়। সেপ্টেম্বের কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রনরেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের সেনা চৌকিতে ভারতের হামলা, যাকে ভারত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলে দাবি করেছে, উত্তেজনা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ঘটনা। তবে তার পটভূমি হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর চৌকিতে জঙ্গিদের আক্রমণ যার জন্যে ভারত পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোকেই দায়ী করে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অব্যাহত গণবিক্ষোভ এবং উরি’র ঘটনার প্রেক্ষিতে সার্কের শীর্ষ সন্মেলন স্থগিত করার ঘটনা আগামীতে এই উত্তেজনা প্রশমনের বদলে আর বেশি টানেপোড়েনের আশঙ্কাই তৈরি করেছে।
গত বছরের ঘটনা প্রবাহের মধ্যে কয়েকটি প্রবণতা সহজেই চিহ্নিত করা যায়; এগুলো হচ্ছে সারা পৃথিবীজুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান, লোকরঞ্জনবাদ বা পপুলিজমের বিকাশ, জেনোফোবিয়া বা বিদেশীদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণু মনোভাবের বিস্তার, রাজনীতির মূলধারায় ইসলামভীতি বা ইসলামোফোবিয়ার স্থান লাভ ও তার বিপরীতে ইসলামপন্থী উগ্র চরমপন্থার বিস্তার। এই প্রবণতাগুলোরই কিছু কিছু ব্রেক্সিট সম্ভব করে তুলেছে। ইউরোপে উগ্র দক্ষিনপন্থী দল যেমন অস্ট্রিয়ায় ফ্রিডম পার্টি, বৃটেনে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি, ফ্রান্সে ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ডেনমার্কে ডেনিশ পিপলস পার্টি, হাঙ্গেরিয়াতে কেডিএনপি’র মতো দলকে মূলধারার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ন করে তুলেছে এই সব প্রবণতা। এই তালিকা দীর্ঘ। যুক্ত্ররাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পেছনেও একই প্রবণতার প্রভাব লক্ষ্যনীয়। কিন্ত এগুলো কেবল ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির বিষয় নয়, এশিয়া এবং আফ্রিকাতেও তার উপস্থিতি সুস্পষ্ট। এই জেনোফোবিয়া এবং ইসলাম বিরোধিতার কারণেই ইউরোপে আশ্রয় নেয়া শরনার্থীরা এখন অনেক জায়গায়ই অমানবিক আচরণের মুখোমুখি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের পেছনে যেমন তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় একটি কারণ, তেমনি হচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদ।
লোকরঞ্জনবাদ বা পপুলিজমের উথানের পেছনে যে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে সেটা অনস্বীকার্য, সেই বৈষম্যের কারণ হিসেবে বিশ্বায়নের দিকেই গবেষকরা অঙ্গুলি সংকেত করেছেন – কিন্ত গত বছরে যে সব লোকরঞ্জনবাদী দল ও নেতার উত্থান ঘটেছে তাঁরা এর বিপরীতে কোনো সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক সমাধানের প্রস্তাব করেছেন এমন উদাহরন নেই। গত দশকে লাতিন আমেরিকাতে এই ধরণের পপুলিজমের উত্থান ঘটেছিল, কিন্ত ২০১৬ সালে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, এমনকি ভেনেজুয়েলার সংসদে, যে সব দল ও নেতারা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা এই লোকরঞ্জনবাদী রাজনীতি ও নীতিমালার বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছেন। কিন্ত এটাও ঠিক যে, ২০১৬ সালের ঘটনাপ্রবাহ একাদিক্রমে নিও-লিবারেল অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরনের কুফল এবং উদার গণতন্ত্রের কাঠামোগত দুর্বলতাকে সকলের সামনে নিয়ে এসেছে। ইউরোপে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় অনেক নির্বাচনেই আমরা এই সব প্রশ্নের মুখোমুখি হবো।
দেশে দেশে উল্লিখিত প্রবণতাগুলোর উপস্থিতি ও শক্তিশালী প্রভাব নিসন্দেহে উদ্বেগজনক, কিন্ত এটি আরো বেশি উদ্বেগজনক এই কারণে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কর্তৃত্বপরায়ণ নেতাদের উত্থান। উগ্র জাতীয়তাবাদ, লোকরঞ্জনবাদ এবং জেনোফোবিয়া যে কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির অনুকূল সেটি ইতিহাসের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, ১৯৩০-এর দশক তার প্রমাণ। এক সময় ভাবা হয়েছিল যে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পৃথিবী সেই পথে এগুবে না, কিন্ত গত বছর যে সব রাজনীতিক সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন এবং প্রভাব বিস্তার করেছেন – পুতিন, দুতের্তে, ট্রাম্প, ফারাগে, এরদোয়ান, মাদুরো, সুচি – তাঁদের আচরণ এবং বক্তব্যই প্রমাণ করে যে নিরংকুশ ক্ষমতাই তাদের লক্ষ্য। নিয়ন্ত্রনহীন বৈষম্যমূলক বিশ্বায়নের বিপরীতে সংরক্ষনবাদী অর্থনৈতিক নীতি এবং জাতীয়তাবাদের নামে নিজস্ব জাতীয় স্বার্থের প্রাধান্য যে একা চলার (বা আইসোলেশানিজমের) জন্ম দেবে তাতে বিশ্ব নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দারিদ্র মোচন বা স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করার কারণ নেই। ২০১৬ সালের ঘটনা প্রবাহ সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়।
গত বছরে সন্ত্রাসবাদের রূপ, প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তিতে পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের পাঠকদের জন্যে তার উদাহরণ রয়েছে নিজ দেশেই। আইসিস যতই ইরাক এবং সিরিয়ায় তার ঘাঁটি থেকে বিতারিত হচ্ছে ততই তার অনুসারীরার ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের আনাচে কানাচে। ইউরোপে সন্ত্রাসী তৎপরতার বৃদ্ধি তার প্রমাণ, প্রমাণ তুরস্ক, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ এমন অনেক দেশ। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালকে যদি আইসিসের উত্থান ও শক্তি সঞ্চয়ের বছর বলে বিবেচনা করি তবে, ২০১৬ সালকে একাদিক্রমে তার পতনের সূচনা এবং ভৌগলিকভাবে তার আদর্শের বিস্তারের সময় বলেই ভাবতে হবে। মনে রাখা দরকার আইসিস-ই একমাত্র আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়, আল-কায়েদার পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া গত বছরে বেশ শক্তিশালী ভাবেই চলেছে; তদুপরি আছে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি গোষ্ঠী যারা স্ব স্ব দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি। এর সঙ্গে আমরা গত বছরে দেখেছি স্ব-প্রনোদিত সন্ত্রাসীদের উত্থান, যারা সাংগঠনিকভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের সঙ্গে যুক্ত না হলেও আদর্শিকভাবে প্রণোদিত হয়েছে। এই আদর্শিক প্রনোদনার সুনির্দিষ্ট কারণ ভিন্ন ভিন্ন, তার পটভূমিতেও পার্থক্য রয়েছে। কিন্ত উগ্র জাতীয়তাবাদ, লোকরঞ্জনবাদের বিকাশ, জেনোফোবিয়া, সমাজে অসহিষ্ণুতা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন যে সন্ত্রাসীদের জন্যে অনুকূল পরিবেশের সহায়ক হয়েছে সেটা অনস্বীকার্য।
যে কোনো বছরের সুচনায় আমরা জানি না সেই বছরে কি ঘটবে; সেই অনিশ্চয়তা স্বাভাবিক। কিন্ত ২০১৬ সালের বিস্ময়কর এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ফলে এই অনিশ্চয়তা কেবল বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয় সেটাই সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

প্রথম আলো’তে প্রকাশিত, ১ জানুয়ারি ২০১৭ (পরিবর্ধিত)

Leave a Reply