ইরানের পারমানবিক অস্ত্র বিষয়ে জাতিসংঘের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি এবং ইরানের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। প্রায় এক দশক ধরে আলাপ আলোচনা, অতীতে যার অধিকাংশই শেষ হয়েছিলো হতাশা এবং পারস্পরিক আক্রমনাত্মক কথাবার্তার মধ্যে, তার পরিণতিতে এই চুক্তি সম্পাদিত হল বলে আমরা বলতে পারি। তবে এটাও বলা দরকার যে এই চুক্তির পথে বড় ধরণের অগ্রগতি হয়েছে গত কয়েক মাসে। এই চুক্তি সম্পাদনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি’র অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিলো বলেই সংবাদ সূত্রগুলো জানাচ্ছে। গত কয়েক মাসের আলোচনায় অগ্রগতির পর দুই সপ্তাহ আগে এই চুক্তি সম্পাদন করার ক্ষেত্রে একটা বাধা সৃষ্টি হয় এবং ইসরাইলের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য চুক্তির ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়। সে সময় ফ্রান্সের বড় ধরণের আপত্তির কারনে চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি।
লক্ষনীয় এই যে এই ধরণের চুক্তির ব্যাপারে ইসরাইল যেমন প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্যভাবে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছে, তেমনি অপ্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছে সৌদি আরব।এই চুক্তিতে মার্কিনিরা অগ্রনী ভূমিকা নেয়ায় দুই দেশের পক্ষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে চাপ দেয়া হয়। এই দুই দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় যুক্ত্ররাষ্ট্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বললে সামান্যই বলা হবে। উভয়েরই প্রভাব রয়েছে দেশের ভেতরে। ফলে এই দুই দেশের চাপের মুখে ওবামা প্রশাসন কোনো ধরনের চুক্তি করতে পারবেন না বলেই অনেকে আশংকা করছিলেন। ইরানের সঙ্গে আলোচনায় একটা বড় ধরণের বাধা তৈরির চেষ্টা হয় গত সপ্তাহগুলোতে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আরো কড়াকড়ি করার জন্যে উদ্যোগ নেয়া হয়। আপাতদৃষ্টে তা মার্কিন নীতির ধারাবাহিকতা বলে মনে হলেও আসলে তা ছিলো ওবামা প্রশাসনকে বিপদগ্রস্থ করার চেষ্টা। অব্যাহত এবং অনুকূল আলোচনার মুখে ইরানের ওপর আরো বেশি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে আলোচনা ভেঙ্গে যেত। এই চেষ্টা মার্কিনীদের কাছে ইরান প্রশ্নে কংগ্রেসের কঠোর মনোভাব এবং ওবামার দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির মুখে সাহসী পদক্ষেপ বলে দেখানো যেতো। কিন্ত তাঁর পরিণতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষর বন্ধ হতো – সেটাই কারো কারো লক্ষ ছিল। ওবামা প্রশাসন তা ভালভাবেই সামাল দিতে পেরেছে।
এখন, আপাতত ছয় মাসের জন্যে হলেও, যে চুক্তি হয়েছে তাতে করে আগামীতে আরো ব্যাপক এবং স্থায়ী চুক্তির পথ উন্মুক্ত হল। এটা সম্ভব হবার পেছনে একটা বড় কারন হিসবে কাজ করেছে ইরানের গত নির্বাচনে হাসান রুহানির বিজয়। ইরানের ক্ষমতাসীন ও নীতি-নির্ধারকরা এটা বুঝতে পেরেছেন যে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনিজাদের আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্র নীতি দেশের জন্যে দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। হাসান রুহানি এক্ষেত্রে বাস্তববাদিতার পরিচয় দিয়েছেন।ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে ইরানের যে ঐকমত্য হয়েছে তাতে করে ইরান এই চুক্তি মানছে কিনা সেটা দেখার জন্যে পশ্চিমা দেশগুলোকে সরাসরি যুক্ত হতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাসের কারনে এই ধরণের কোন রকম তদারকি ইরানের নাগরিকদের কাছে সংগত কারনেই গ্রহণযোগ্য হতো না।
ইরানের সঙ্গে এই চুক্তি, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের উন্নয়নকে, কেবল এই চুক্তি সম্পাদনের মধ্যে দেখলে হবে না। এর আঞ্চলিক তাৎপর্য ও সম্ভাবনা বিরাট। সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপোড়েনের যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাঁর প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি এই অঞ্চলের রাজনীতিকে বদলে দিতে পারে। তাছাড়া আগামী বছরে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্রকে কেবলমাত্র পাকিস্তানের ওপরে নির্ভর করতে হবেনা। সম্ভাব্য তালেবানের উত্থান মোকাবেলায় ইরানের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ রয়েছে।
ফলে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমাজের সম্পর্কোন্নয়নের যে সম্ভাবনা এই চুক্তির মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে তা একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তির পথ ধরে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি অগ্রসর হতে পারে তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুচনা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেই পথ খুব সহজ নয়, এর বিরোধিরা শক্তিশালী। তাঁরা যে এই চেষ্টা ভণ্ডুল করে দিতে চাইবেন সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ওয়াশিংটন, ২৩ নভেম্বর ২০১৩
It has been written well. It has said about a possibility.
We are observing that in many cases KSA and Israel act similarly. WE do not understand this chemistry. Any way, we tank Ali Reaz sir.
ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়। শাহ শাসনামলের পতনের পর দীর্ঘদিন পরমাণু কর্মসূচিতে ভাটা পড়ে। এরপর রাশিয়া ও লাতিন আমেরিকার সহায়তা স্বল্প মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করণ কাজ শুরু করে। এরপর থেকে ইরানের কর্মসূচি নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। যাহোক চুক্তি হওয়ায় যুদ্ধের অবস্থা থেকে আপাতত রেহাই পাওয়া যাচ্ছে।
নেতানিয়াহু বলছে, পরমাণু কর্মসূচি আরও বেগবান করতে বিশ্বকে কলা দেখানোর চাল চেলেছে ইরান। আর সেই চালে ধরা পড়েছে তার মিত্ররা। আশা করি তার ধারণা ভ্রান্ত হোক, বিশ্ব শান্তি পাক, শান্তি বিরাজ করুক সবার মনে।
ইরানকে অগ্রাহ্য করে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু করা যাবে না—এ সমঝোতা সেই বার্তাই দিচ্ছে। তবে রাশিয়ার দৃষ্টিকোন থেকে এ সমঝোতাকে কিভাবে দেখা হবে? হতে পারে দুই পক্ষ মিলেমিশে বাণিজ্যের নীতি নিয়েছে।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতায় বাস্তবে ইসরায়েলের অতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু হয়নি। ইসরায়েলের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে কিছুই করবে না। তবে এই চুক্তির জন্য হয়ত বিনা কারণে ফিলিস্তিনিদের আরো মাশুল দিতে হবে। ইতিমধ্যেই নেতানিয়াহু সরকার পশ্চিম তীরের অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতিতে ৮০০ নতুন বাড়ি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো কথা বলেনি।