সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত প্রতিবেশগতভাবে সংবেদনশীল শ্যালা নদীর ইরাবতী ডলফিনের অভয়ারণ্য সংলগ্ন স্থানে গত ৯ ডিসেম্বর সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস তেল বহনকারী ‘সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের একটি জাহাজের আরেকটি জাহাজের সাথে সংঘর্ষ ঘটলে ডুবে যায়। এর ফলে ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ে শ্যালা নদীসহ চাঁদপাই রেঞ্জের প্রায় ২০টি খাল, দুটি ভাড়ানী, শীষে খাল, ঝোরা ডোবা ও বনের অভ্যন্তরে (পার্থ, ২০১৫: ২৯)।
শ্যালা নদীতে তেল নিঃসরণের এই ঘটনার রাজনৈতিক সংবেদনশীলতাও রয়েছে অন্তত দুটি কারণে। প্রথমটি হলো, এই রুটে নৌ চলাচল ২০১১ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ঘষিয়াখালী খালের নাব্যতা হারানোর কারণে শ্যালার নদীর ভেতর দিয়ে সরকার, অনেক বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও, নৌ চলাচলের অনুমতি প্রদান করে। দ্বিতীয়ত, সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যেই ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বহু বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহন করা হবে পশুর নদ দিয়ে এবং এই নদের পানিও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে। এ ধরনের পরিকল্পনা সুন্দরবনের জন্য কী রকম ঝুঁকিপূর্ণ, তা শ্যালা নদীতে ডুবে যাওয়া তেলবাহী জাহাজটি এক রকমের ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরেছে।
একদিকে প্রতিবেশগত সংবেদনশীলতা, অন্যদিকে সুন্দরবনের খুব কাছেই কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে উদ্ভূত রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে এই তেল নিঃসরণের দুর্ঘটনা সরকারকে চাপে ফেলে দেয় এবং তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ‘উন্নয়ন’ প্রচারণা ও তাদের ভাবমূর্তি এক ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়।
এ রকম অবস্থায় সুন্দরবন রক্ষার জন্য জনমতের এই চাপ উতরানোর চেষ্টায় বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহলের শরণাপন্ন হয়। তারই অংশ হিসেবে তেল বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইকোনমিক রিলেশন ডিভিশন) প্রেরিত এক চিঠির মাধ্যমে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বা ইউএনডিপিকে কারিগরি সহায়তার জন্য অনুরোধ করে। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে ইউনাইটেড নেশনস ডিজাস্টার অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন টিম/ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম/ইউএন অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব দ্য হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স/জয়েন্ট এনভায়রনমেন্ট ইউনিট (জেইইউ) ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় (ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫: ৮)। এই গবেষক দলের জন্য বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করে ইউএসএআইডি, ফ্রান্স সরকার আর ইউরোপিয়ান কমিশন। এ ছাড়াও তাদের গবেষণা কাজে সাহায্য করার জন্য সাথে ছিলেন দেশের সর্বজনের (পাবলিক) বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপকসহ এনজিও ও ইউএনডিপির স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ। এই প্রতিনিধি দলে মোট ২৫ জন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের গবেষক ও কর্মকর্তা ছিলেন। এঁদের মধ্যে ১৪ জন দেশীয় এবং ১১ জন বিদেশি বিশেষজ্ঞ (পূর্বোক্ত)।
এই প্রতিনিধিদল ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের প্রাথমিক গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে স্বয়ং বন ও পরিবেশমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা দাবি করেন যে শ্যালা নদীতে তেল নিঃসরণের ‘তাৎক্ষণিক প্রভাব সীমিত’ এবং এই ঘটনার ‘দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব’ নিরূপণে ‘দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের’ ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে (মাহমুদ, ২০১৫)।
আন্তর্জাতিক গবেষণাটির বিপরীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুনের নেতৃত্বে চারজন নিয়ে গঠিত গবেষণাদল তাদের প্রকাশিত প্রাথমিক গবেষণা ফলাফলে সুনির্দিষ্টভাবে সুন্দরবনে তেল নিঃসরণের মোট ১২টি তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব চিহ্নিত করেছে। এই স্বেচ্ছাসেবী গবেষকগণ দাবি করেন যে সুন্দরবনের ১২০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত তাঁদের গবেষণা এলাকার অন্তর্ভুক্ত ৫০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুন্দরবন ‘মারাত্মক তেল দূষণের’ শিকার হয়েছে (চৌধুরী, ২০১৫: ২৬)।
এই লেখাটিতে সুন্দরবনের ওপর তেল নিঃসরণ সংক্রান্ত এ দুটি প্রাথমিক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশিত ফলাফলের ভিন্নতার কারণ বোঝার চেষ্টা করা হবে। অন্য কথায়, ইউএনডিপি কর্তৃক গঠিত আন্তর্জাতিক গবেষকদল এবং সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গঠিত গবেষকদলের গবেষণা ফলাফল কেন দুই রকম হলো, তা বিশ্লেষণ করা হবে। এক্ষেত্রে মোটা দাগে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা দুটির একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হবে। এগুলো হলো : গবেষণা দুটির সময়কাল, স্থানিক পরিসর, উদ্দেশ্য ও গবেষণা পদ্ধতি। এরপর গবেষণা দুটির ফলাফলের ভিন্নতার ওপরও আরো বিস্তৃত আলোচনা করা হবে। তাই লেখাটির প্রথম ভাগে তিনটি উপাদানভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদনের তুলনামূলক পর্যালোচনা এবং দ্বিতীয় ভাগে ফলাফলের বিস্তৃত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শেষে উপসংহার টানা হবে।
১. গবেষণা প্রতিবেদন দুটির তুলনামূলক পর্যালোচনা
গবেষণা সময়কাল ও গবেষণাধীন এলাকা
যেহেতু গবেষণা দুটি করা হয়েছে সুন্দরবনে তেল নিঃসরণের প্রভাব নিরূপণের জন্য, তাই গবেষণা সময়কাল ও গবেষণাধীন এলাকা এ ধরনের গবেষণার ফলাফলের ভিন্নতা বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শ্যালা নদীতে তেল নিঃসরণের শিকার হওয়া সুন্দরবনের এলাকাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করাসহ তেল নিঃসরণ বিস্তারের ধরন এবং তার প্রভাব নিরূপণের সময়কাল এবং গবেষণাধীন এলাকা জানা প্রয়োজন।
ইউএনডিপি পরিচালিত গবেষণাটি পরিচালিত হয় ঘটনা ঘটার দুই সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২৩-২৭ ডিসেম্বর ২০১৪-তে। পশুর নদ ও শ্যালার অন্যান্য শাখানদী-খাল-বিল এবং এদের তীরবর্তী পারগুলো প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তেল নিঃসরণে আক্রান্ত এলাকা এবং তার ধরন নিরূপণের চেষ্টা করা হয়। এই তেল নিঃসরণের বিস্তার নির্ধারণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রা স্কেলের ওপর নির্ভর করা হয়। এ সম্পর্কে লেখাটির গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার অংশে বিস্তারিত আছে। ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত নদ-নদী, খাল, খাড়ি আর এগুলোর আশপাশের পারকে গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাহন হিসেবে স্পিডবোট ব্যবহার করেছিল ইউএনডিপির গবেষকদল। আকাশপথে ওপর থেকেও তেল নিঃসরণের বিস্তার বোঝার চেষ্টা করা হয় ২৭-২৯ ডিসেম্বরে এবং তা তুলনা করা হয় তেল নিঃসরণের ঘটনাটির পরপর তেল নিঃসরণের তাৎক্ষণিক বিস্তারের সাথে (ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫: ১৫-১৬)।
অন্যদিকে ড. আবদুল্লাহ হারুনের নেতৃত্বাধীন গবেষকদল তেল নিঃসরণের বিস্তার ও তার প্রভাব নিরূপণের জন্য তাদের গবেষণাটি পরিচালনা করে ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত। অর্থাৎ দুর্ঘটনাটির দুই দিন পর থেকে গবেষণাটি শুরু হয়। প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পর পর তারা নমুনা সংগ্রহ করে। তেল ছড়িয়ে পড়া ১৫টি পৃথক স্থানে মাঠ জরিপ ও নমুনা সংগ্রহসহ অন্যান্য কাজ করে। তেলদূষণমুক্ত এলাকা (ঘড়িলাল, জোরশিং, কলাগাছিয়া) থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১২০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুনের গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষণার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাঁরা দেশীয় সাধারণ নৌকা ব্যবহার করেন (চৌধুরী, ২০১৫: ১৯)।
গবেষণা উদ্দেশ্য
ইউএনডিপির গবেষকদল তাদের গবেষণার দুটো প্রধান উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে। সেগুলো হলো:
ক) সুন্দরবনে তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত এবং তা সরাতে সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টাকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায় তা খতিয়ে দেখা। অন্য কথায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় সরকারের সামর্থ্য বৃদ্ধির উপায় প্রস্তাব করা।
খ) তেল নিঃসরণ-পরবর্তী অবস্থা নিরূপণ এবং এই অবস্থা ধাপে ধাপে মোকাবিলা এবং তা উন্নয়নের জন্য একটা বাস্তবধর্মী (অ্যাকশন প্ল্যান) পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা প্রদান করা।
অবশ্য এই উদ্দেশ্য দুটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের ইকোনমিক রিলেশন ডিভিশন ইউএনডিপির কাছে তেল নিঃসরণ মোকাবিলায় সহায়তা চেয়ে তাদের পাঠানো চিঠিতে এভাবেই প্রস্তাবিত গবেষণার পরিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল (দেখুন: ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫ঃ ৪৪; সংযুক্তি-১ (সহায়তার অনুরোধ))।
তাই এ ধরনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়/মোকাবিলায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের সামর্থ্য বৃদ্ধির বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই ইউএনডিপি তেল নিঃসরণ-পরবর্তী সুন্দরবনকে নিয়ে তাদের নিজস্ব গবেষণার পরিধি নির্ধারণ করেছিল। সেজন্য তাদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সুন্দরবন অঞ্চলে তেল দূষণের মাত্রা নিরূপণ; এই দূষণ মোকাবিলায় তখন পর্যন্ত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ খতিয়ে দেখা; তেলদূষণ পরিবেশগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা নিরূপণ করা।
তবে ওপরে বর্ণিত গবেষণার উদ্দেশ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গবেষণা পরিধির কারণে ইউএনডিপির গবেষকদলের কাছে তেল নিঃসরণের ফলে সুন্দরবন কী ধরনের প্রতিবেশগত ও বাস্তুতান্ত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন ইতোমধ্যে হয়েছে অথবা ভবিষ্যতে হতে পারে, সেই বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না; এই ধরনের তেল নিঃসরণজনিত সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য কিভাবে বাড়ানো যায়, সেটাই মুখ্য ছিল। প্রতিবেদনটিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের জন্য স্বল্প (০-৩ মাসের মধ্যে, মধ্য (৩-৬ মাসের মধ্যে) ও দীর্ঘ মেয়াদে (৬-১৮ মাসের মধ্যে) কী করণীয়, সে সম্পর্কিত ১৪টি প্রস্তাবনায় নজর দিলে তা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে (ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫ঃ ৩৬-৪০; ৮০-৮২)। এই প্রস্তাবনাগুলো নিশ্চিত করেছে যে সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ এবং সরকারের সামর্থ্য বাড়ানোর বিষয়গুলোসহ ভবিষ্যতে সুন্দরবনকে ঘিরে কী ধরনের প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে তার নির্দেশনা দেওয়া। যেমনÑসেখানে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, কিভাবে স্থানীয় জনগণের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে; এ ছাড়াও তেল দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত বাদাবন পুনরুদ্ধার (Mangrove Restoration) কীভাবে করা যাবে, সেই উদ্দেশ্যে ঢাকায় একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা (পূর্বোক্তঃ ৮২)।
পক্ষান্তরে, ড. হারুন কর্তৃক পরিচালিত গবেষণার উদ্দেশ্য খুবই সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট। এই গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল তেল নিঃসরণের কারণে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে বা পড়বে, তা নিরূপণ করা। তাই তাঁর গবেষণায় সুন্দরবনের মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে (চৌধুরী, ২০১৫ঃ ১৮-১৯)। তেল নিঃসরণ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছিল বা তেল নিঃসরণের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর কী ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে, তা নিরূপণ ড. হারুনের গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল না।
গবেষণা পদ্ধতি
২৫ জন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত ইউএনডিপির গবেষকদল ছয়টি উপদলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। এই উপদলগুলো আলাদা আলাদাভাবে ছয়টি বিষয়ে মনোযোগ দেয়। সেগুলো হলো : তেল বিস্তার নিরূপণ, তেল সরানোর পদ্ধতি যাচাই, জলজ প্রভাব নিরূপণ, বাদাবন, বন্যপ্রাণী, মানবপ্রাণের ওপর স্বাস্থ্য ও জীবিকাগত প্রভাব নিরূপণ।
তবে প্রতিবেদনটিতে তেল বিস্তার নিরূপণের জন্য নদ-নদীগুলোর পারে অবস্থিত উদ্ভিদে বা বৃক্ষরাজির গায়ে লেগে থাকা তেলের আস্তরণের উপস্থিতির মাত্রাকে বা অনুপস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়েছে এবং সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্কেলের ওপর ভিত্তি করে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে (পূর্বোক্তঃ ১৪; টেবিল-৪)। যেমনÑদৃশ্যমান তেলের অনুপস্থিতি, নিচু, মধ্যম ও উঁচু মাত্রার বিস্তার। নদ-নদী বা খালপারে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়া তেল এবং সেখানকার উদ্ভিদরাজির ওপর ক্রমাগতভাবে লেগে থাকা তেলের আস্তরণকে (৩০ সেন্টিমিটারের কম বা <৩০ সেন্টিমিটার) নিুমাত্রার দূষণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মধ্যমমাত্রার দূষণের ক্ষেত্রে পারের মাটিতে লেগে থাকার পরিবর্তে নদ-নদী বা খালপারে অবস্থিত উদ্ভিদরাজি ও ঘরবাড়ি বা এ ধরনের অবকাঠামোতে লেগে থাকা আস্তরণকে (<৩০ সেন্টিমিটার) বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। উঁচুমাত্রার দূষণের ক্ষেত্রে নদ-নদী, খালপারের মাটিতে ও উদ্ভিদরাজিতে লেগে থাকা (>৩০ সেন্টিমিটার বিস্তারসম্পন্ন) তেলের আস্তরণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। (পূর্বোক্তঃ ১৪)। শ্যালা নদীর ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত পারকে উঁচুমাত্রার দূষণের শিকার বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিবেদনটিতে স্পষ্ট করা হয়নি যে এভাবে দূষণমাত্রা নির্ধারণ পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে বা সর্বজগতের কাছে স্বীকৃত কি না।
আবার গবেষণা পদ্ধতির অংশ হিসেবে সুন্দরবন সংক্রান্ত বিরাজমান গবেষণা কর্মগুলোর পর্যালোচনা, স্থানীয় পর্যায়ে ভূমি ও জলজ বাহনভিত্তিক প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, স্যাম্পলিং, সমীক্ষা ইত্যাদি অন্তর্র্ভুক্ত ছিল। নিঃসৃত ফার্নেস তেল স্ন্দুরবনের জলজ পরিবেশে কী প্রভাব ফেলেছে বা ফেলতে পারে, তা জানার জন্য সাধারণত তেল দূষণে আক্রান্ত পানির নমুনা সংগ্রহ করে হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি নির্ণয় করতে হয়। তবে ইউএনডিপি তাদের গবেষণায় এই পদ্ধতি অনুসরণ করেনি। তারা যুক্তি দেখিয়েছে যে বাংলাদেশে পানির হাইড্রোকার্বন বিশ্লেষণের সুযোগ সীমিত এবং গবেষণা সময় সীমিত। তাই ইউএনডিপির গবেষকদল পানির হাইড্রোকার্বন বিশ্লেষণের পরিবর্তে নির্ভর করেছে বাংলাদেশের বন বিভাগ কর্তৃক সম্পাদিত প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন এবং রাসায়নিক বিশ্লেষণের ওপর, যা করা হয়েছিল দুর্ঘটনাটির পরপরই (চৌধুরী, ২০১৫ঃ২১)। উপরন্তু তারা আরো যুক্তি দেখায় যে একটি তুলনামূলকভাবে বেশি স্রোতসম্পন্ন (দিনে-রাতে দুইবার করে জোয়ার-ভাটার কারণে) নদ-নদীর পানির নমুনায় রাসায়নিক, ভৌত ও শারীরবৃত্তীয় (Biological) উপাদানের অস্তিত্ব সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়। তাই আলাদাভাবে নমুনা সংগ্রহের চাইতে ইউএনডিপির গবেষকদল দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল, যাতে জলজ পরিবেশগত পরিবর্তনের ধারাটি চিহ্নিত করা যায়। তাই তারা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জলজ পরিবেশের ওপর তেল নিঃসরণের প্রভাব নিরূপণে নমুনা পানিতে ফাইটোপ্লাংকটনের উপস্থিতি যাচাই করার বিষয়টিকে প্রস্তাব (recommend) করেনি বা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেনি। তাদের এই অবস্থানের পক্ষে তারা ঐ একই বিষয়ে অন্য কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার রেফারেন্স প্রদান করেনি। গবেষণা প্রতিবেদনটিতে তারা আরো যুক্তি দেখায় যে নদ-নদীর উপরিভাগস্থ পানির (surface water) হাইড্রোকার্বন বিশ্লেষণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো পরিমাণগত কোনো দিকনির্দেশনা (quantitative guidelines) নেই। তবে এ-সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত নিদের্শনাবলি থাকলেও তা শুধু নিরাপদ জনবিনোদনের জন্য প্রযোজ্য। তাই জলজ পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ইউএনডিপির গবেষকদল স্থানীয় জেলেদের সাক্ষাৎকার ও শ্যালা নদীর ২০ প্রজাতির মাছ, দুটি কাঁকড়া, একটি চিংড়ি পোনা এবং একটি বড় চিংড়ির নমুনার ব্যবচ্ছেদের ওপর নির্ভর করেছে।
একইভাবে বাদাবনের ওপর প্রভাব নিরূপণে শুধুমাত্র গোলপাতাসহ অন্যান্য বৃক্ষরাজির ওপর তেলের বিস্তারের মাত্রা নিয়ে প্রতিবেদনটিতে আলোচনা করা হয়েছে এবং এই তেলের আস্তরণ সরাতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু এই বিভিন্ন মাত্রায় তেলে আক্রান্ত হওয়ার কারণে কী ক্ষতি হয়েছে তার রাসায়নিক বা অন্য কোনো বিশ্লেষণ পদ্ধতি এতে অনুপস্থিত।
অন্যদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাটিতে পদ্ধতিগতভাবে মূলত পানি, মাটির নমুনা গবেষণাগারে বিশ্লেষণ ছাড়াও তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার, নির্দিষ্ট বিষয়ে দলগত আলোচনার (focus group discussion) ওপর র্নিভর করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ শেষে সেকেন্ডারি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মূলত এই গবেষণাটির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন ও তাঁর সহকর্মীদের সুন্দরবন নিয়ে অনেক দিনের গবেষণা অভিজ্ঞতা থাকার ফলে এ-সংক্রাস্ত তথ্যাদির ভাণ্ডার এই গবেষকদলের অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি সমৃদ্ধ। তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে তেলদূষণমুক্ত এলাকার পানি ও মাটির সাথেও দূষিত অঞ্চলের পানি ও মাটির অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। উপরন্তু তেল দূষণের পূর্বে পরিচালিত গবেষণার ফলাফলের সাথেও তুলনা করা হয়েছে দূষণ-পরবর্তী অবস্থার। এক্ষেত্রে সেই অঞ্চলের মাটি ও পানির রাসায়নিক ও গুণগত অবস্থার একটা গুণগত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আর এই চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই গবেষণাটি পানিতে ফাইটোপ্লাংকটন, জুয়োপ্লাংকটন ও প্রোটোজোয়ার উপস্থিতিকেও দূষণের প্রভাব বোঝার জন্য বিবেচনায় নিয়েছে গবেষকদল। এর কারণ হিসেবে তারা জলজ পরিবেশের খাদ্যচক্রের বিষয়টিকে উল্লেখ করেছে। কেননা জুয়োপ্লাংকটন এই খাদ্যচক্রের প্রথম ধাপের খাদক।
একইভাবে মাটিতে তেল নিঃসরণের প্রভাব বোঝার জন্য বেনথোসের অবস্থা বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। বেনথোসকে বিবেচনার কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন যে এটা জলজ পরিবেশে মাটির উপরিভাগে বসবাসকারী প্রাণী, যা খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একইভাবে জীববৈচিত্রের ওপর তেল নিঃসরণের প্রভাব বোঝার জন্য তেলদূষিত এলাকা, তেলদূষণমুক্ত এলাকা ও দূষণের পূর্বে পরিচালিত গবেষণা ফলাফলের সাথে দূষণ-পরবর্তী গবেষণার ফলাফলের তুলনা করা হয়েছে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ লবণাক্ত জলাভূমির এক ধরনের পদ্ম, সুন্দরীগাছে ফল/বীজ গাছে শ^াসমূল, লাল, বাদামি ধরনের শৈবাল বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আর প্রাণীর ওপর প্রভাব বিশ্লেষণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ (পারশে, খোরসুলা, বাগদা, হরিণা প্রভৃতি), মাডস্কিপার, কাঁকড়া, শামুক, ব্যাঙ, সাপ, গুইসাপ, কুমির, মাস্কড ফিনফুট, সাধারণ পাখি, বনমোরগ, পরিযায়ী পাখি, উদবিড়াল, ভোঁদড়, ডলফিন, হরিণ, বন্য শূকর ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের তুলনামূলক তথ্য আর উপাত্তের উপস্থিতি ড. আবদুল্লাহ হারুনের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাটির গ্রহণযোগ্যতাটি সম্ভবত আরো বেশি বেড়েছে বলে মনে হয়। কেননা ইউএনডিপি পরিচালিত গবেষণাকর্মটিতে জুয়োপ্লাংকটন বা ফাইটোপ্লাংকটনের উপস্থিতিকে মোটেই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি দূষণের প্রভাব বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে।
২. গবেষণা ফলাফলের তুলনামূলক পর্যালোচনা
ইউএনডিপির গবেষণায় তেল নিঃসরণের প্রভাব বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মোটাদাগে চারটি বিষয়ের (যেমন: তেলদূষণের বিস্তৃতি, তেলদূষণ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ, পরিবেশগত প্রভাব এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও তাদের ওপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব) ওপর আলোকপাত করা হয়েছে, যার কিছুটা প্রাসঙ্গিকভাবে এই লেখাটির আগের অংশগুলোতে আলোচিত হয়েছে। তবে ড. আবদুল্লাহ হারুনের গবেষণায় তেলদূষণের প্রভাবকে একেবারে ভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তেলদূষণের কারণে ইতোমধ্যে বিরাজমান বা সম্ভাব্য বাস্তুতান্ত্রিক প্রভাবের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণকে এখানে মূলত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাস্তুতান্ত্রিক এই অর্থে যে ঐ গবেষণায় সুন্দরবনে বসবাসরত জীব ও প্রাণিকুলের বসবাস উপযোগিতাসহ তাদের নিজেদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া এবং সেই ভৌত পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সেজন্য এই গবেষণায় পানি, মাটি, উদ্ভিদ, বৃক্ষরাজি, প্রাণিকুলকে সুনির্দিষ্টভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইউএনডিপির গবেষণাটিতে এই উপাদানগুলো বিবেচিত হয়েছে শুধুমাত্র পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে; বাস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ওভাবে গুরুত্ব পায়নি। এই বিশ্লেষণের আওতাভুক্ত হয়েছে শুধুমাত্র জলজ পরিবেশ, বাদাবন বা ম্যানগ্রোভ বন এবং প্রাণিকুল তেলের আস্তরণে ঢেকেছে কি না, যেটা অবশ্য আবদুল্লাহ হারুনের গবেষণার সাথে কিছু অংশে মিলে যায়। তাই গবেষণা দুটির শুধুমাত্র এই তিনটি সাধারণ বিষয়েই ফলাফল সংক্রান্ত তুলনামূলক আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে।
জলজ পরিবেশের ওপর প্রভাব
ইউএনডিপির প্রাথমিক গবেষণা প্রতিবেদনটিতে জলজ পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণে কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল তুলে ধরা হয়নি। তার পরিবর্তে কিছু সাধারণ প্রভাবের সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। যেমন: প্রতিবেদনটিতে তেলদূষণের কারণে জলজ জীবসম্ভার শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া কিভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, তা বলা হলেও সুন্দরবনের প্রেক্ষিতে কোনো সুনির্দিষ্ট উদাহরণ দেওয়া হয়নি। তার বদলে মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, ডলফিনের প্রজনন ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘ মেয়াদে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তার কিছু সাধারণ পর্যালোচনা করা হয়েছে। এদের ডিম, শুককীট, ছোট পোনা কিভাবে তেলদূষণের কারণে সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা বলা হয়েছে ইউএনডিপির প্রতিবেদনে। খাদ্যশৃঙ্খলের ওপর এর প্রভাব পড়া বিষয়েও সাধারণ কিছু আলোচনা করা হয়েছে। কেননা এদের বসবাস মূলত জোয়ার-ভাটার অন্তর্বতী স্থানে, অগভীর খাড়ি আর খালে। জলজ পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণে তেলদূষণের আগের এবং পরের অবস্থার তুলনামূলক কোনো আলোচনা করা হয়নি। শুধুমাত্র তেলদূষণের শিকার জলাঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে একটি মানচিত্রের মাধ্যমে আর পানির গভীরতা, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, চঐ+, পানির অস্বচ্ছতা মাত্রার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তবে এটা ইউএনডিপির নিজস্ব কোনো গবেষণা থেকে উদ্ভূত নয়। বরং উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে খুলনা অঞ্চলের পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম। পর্যবেক্ষণকৃত জলজ প্রাণীর একটি তালিকাও প্রদান করা হয়েছে সেখানে। ১, ২, ৩, ৪: এই সংখ্যাগুলো দিয়ে জলজ প্রাণীর উপস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। ১ দিয়ে অনুপস্থিত প্রাণী, ২ দিয়ে খুবই অল্পসংখ্যক, ৩ দিয়ে কিছুসংখ্যক, এবং ৪ দিয়ে সংখ্যায় অনেককে নির্দেশ করা হয়েছে (ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫:৭২; টেবিল ২)। কিন্তু দূষণের পরে এবং আগের অবস্থা বোঝার জন্য এই তালিকাটি কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়নি। জলজ প্রাণীর তালিকাভুক্ত ছিল মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, কম্বোজ, মাডস্কিপার, সরীসৃপ, উভয়চর প্রাণী, ডলফিন, ভোঁদড়, কচ্ছপ। তবে প্রজাতিভেদে এগুলোর কোনো স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই এই তালিকাটিতে।
অন্যদিকে আবদুল্লাহ হারুনের গবেষণায় এ রকম একটি তালিকা রয়েছে, যেখানে সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কিছুটা আলোচনা এই লেখায় আগের অংশে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে তেল নিঃসরণজনিত জলজ পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের আলোচনা সরাসরি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই তালিকার মোট ১২টি সম্ভাব্য বা বিরাজমান প্রভাবের মধ্যে ৮টিই জলজ পরিবেশ সংক্রান্ত। তাঁরা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখান যে তেলদূষণের কারণে ফাইটোপ্লাংকটন ও জুয়োপ্লাংকটনের বৈচিত্র্য ‘আশঙ্কাজনকভাবে’ হ্রাস পেয়েছে (চৌধুরী, ২০১৫: ২২)। তেলদূষণের শিকার হওয়া এলাকায় খুব কম পরিমাণে মাত্র ১৮ প্রজাতির ফাইটোপ্লাংকটন শনাক্ত করা গেছে, দূষণের আগে যেখানে ছিল ৪৭ প্রজাতি। আর প্রতি লিটারে পাওয়া গেছে মাত্র ২৪-৬৭টি। এই সংখ্যা ছিল প্রতি লিটারে ২২৬-৪৫৬টি (পূর্বোক্তঃ ২২-২৩)।
বাদাবনের ওপর প্রভাব
ইউএনডিপির প্রতিবেদনটিতে বাদাবনের ওপর প্রভাব নিরূপণের বিষয়টি সীমাবদ্ধ থেকেছে মূলত তেলের আস্তরণ কী মাত্রায় নদ-নদী, খাল, খাড়ির পাড়ে বা তীরবর্তী উদ্ভিদরাজি অথবা বৃক্ষরাজিতে লেগে রয়েছে, তা নির্ধারণে। এতে বলা হয় যে পরিদর্শনকৃত ৯টি খাড়ির মধ্যে ৮টির উদ্ভিদের পাতায়, গুঁড়িতে, উপরিভাগের মূলে, শ্বাসমূলে তেলের আস্তরণ নিুমাত্রার। শুধু একটি খাড়িতে তেলের আস্তরণের মাত্রা মধ্যম পর্যায়ের। পাড়ের মাটিতে ও রকম উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেলের আস্তরণ দেখা যায়নি (ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫: ২৩)।
এমনকি ইউএনডিপির গবেষকদল নদ-নদী-খালসংলগ্ন বনের মাটির উপরিভাগ (forest floor areas) পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে তেলের আস্তরণের কোনো চিহ্ন তারা দেখতে পায়নি। তারা এও জানায় যে তাৎক্ষণিকভাবে শ্যালা নদীর ভেতর দিয়ে নৌচলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তেলের আস্তরণ নদী-খাল ছাপিয়ে বনের ভেতর প্রবেশ করতে পারেনি (পূর্বোক্ত, ২০১৫: ২৪)।
জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী স্থানে জš§ নেওয়া তেলের আস্তরণে আবৃত গুল্ম আর গোলপাতার নমুনা তারা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এ দুই নমুনার ক্ষেত্রে তারা জানায় যে নদী-খালপারের উদ্ভিদ-গুল্মে লেগে থাকা তেল থেকে ভারী কোনো উপাদান পানিতে নিঃসৃত হয়নি। তবে এই তেলদূষণের কারণে ঐ পানিতে চিকচিকে আবরণ ধরেছে। সেই উদ্ভিদরাজির ওপর তেলের আস্তরণ এত ব্যাপক নয় যে সেগুলো পাড় থেকে কেটে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হবে। তবে এই তেলদূষণের কারণে দুটি খাড়িসংলগ্ন কিছু কচি শ্বাসমূলীয় বৃক্ষের পাতার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও বন বিভাগের বরাত দিয়ে ইউএনডিপির প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয় যে ঐ শ্বাসমূলীয় গাছগুলোতে আবার নতুন করে কচি পাতা গজাচ্ছে, যদিও বিভিন্ন স্থানে গোলপাতা নিুমাত্রা থেকে উঁচুমাত্রার দূষণের শিকার হয়েছে। তাই সেগুলো কেটে না ফেলার পরার্মশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ২৪ ধরনের বৃক্ষ ও বিভিন্ন প্রজাতির গুল্ম পর্যবেক্ষণের একটি তালিকাও সংযুক্ত করা হয়েছে, যদিও সেটাতে তেলদূষণের মাত্রা উল্লেখ করা হয়নি (পূর্বোক্তঃ ৮০)।
তবে ড. আবদুল্লাহ হারুনের গবেষণায় উদ্ভিদের ক্ষতিসংক্রান্ত বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট মন্তব্য রয়েছে। সবচাইতে বড় দিক হলো, গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ, জলাভূমির পদ্ম, সুন্দরীগাছের বীজ, শ্বাসমূলে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, তা জানতে তেলদূষণ এলাকা, তেলদূষণমুক্ত এলাকা ও দূষণের পূর্বে পরিচালিত গবেষণার তথ্য সন্নিবেশ করে ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করেছে আব্দুল্লাহ হারুনের গবেষকদল (চৌধুরী, ২০১৫: ২৪-২৬)। যেমন: জলাভূমির পদ্ম, জোয়ার-ভাটার অন্তর্বর্তী অঞ্চলের ছোট গুল্ম জাতিয় উদ্ভিদ, সুন্দরীগাছের ফল যে পচে যাচ্ছে তেলদূষণের কারণে, তা নিশ্চিত করে বলেছেন।
তাঁরা এও বলেছেন যে শ্বাসমূলে তেলদূষণের কারণে গাছের জৈবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সুন্দরী, কেওড়া, গেওয়াসহ বিভিন্ন গাছের শ্বাসমূল তেলদূষণের শিকার হয়েছে, তা তাঁরা আলোচনা করেছেন। এর বাইরে অন্যান্য গাছ, যেমন: খালিশা, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন ইত্যাদি তেলের আস্তরণে ঢেকে গেছে, তা তাঁদের প্রতিবেদনে আছে, এবং এর ফলে কিছু গাছ যে মারা যাবে, সে কথাও তাঁরা উল্লেখ করেছেন (চৌধুরী, ২০১৫: ২৬)।
বন্যপ্রাণীর ওপর প্রভাব
বন্যপ্রাণীর ওপর নিঃসৃত তেলের প্রভাব নিরূপণে দুটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ইউএনডিপির খসড়া প্রতিবেদনে। প্রথমটি হলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বন্যপ্রাণীর ওপর তৎক্ষণাৎ কী ধরনের তীব্র প্রভাব পড়েছে, তা মূল্যায়ন করা। দ্বিতীয় লক্ষ্যটি হলো প্রধান প্রধান বন্যপ্রাণীর ওপর কী ধরনের ধারাবাহিক প্রভাব পড়তে পারে, তা নিরূপণে একটি দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া। এ দুই লক্ষ্য সামনে রেখে ইউএনডিপির গবেষকদল ৮২টি বন্যপ্রাণীসহ মোট ১০৮টি জীবজন্তু তাদের পর্যবেক্ষণের আওতায় আনে। এর মধ্যে তারা তিনটি পাখির (একটি বড় আকারের সারস, একটি মাঝারি আকারের এবং একটি ঈগল) গায়ে হালকা তেল লেগে থাকতে দেখে (পুরো শরীরের ২-২৫%)। আরো দুটি পাখির (মাঝারি আকারের একটি সারস এবং একটি বুলবুলি) গায়ে কিছুটা তেলের চিহ্ন খুঁজে পায় (ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫ঃ ২৭-২৮; সংযুক্তিঃ ১৩)।
বিভিন্ন প্রকাশিত ছবি আর প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে জীবজন্তুর ওপর নিঃসৃত তেলের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করে ইউএনডিপির গবেষকদল। তাদের মতে, একটি মাঝারি ধরনের সারস, দুটি কুমির এবং একটি গুইসাপকে তেলে ঢাকা অবস্থায় দেখা গেছে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এক্ষেত্রে তারা ড. আবদুল্লাহ হারুনের প্রতিবেদন থেকেও তথ্য তুলে ধরে (পূর্বোক্তঃ ২৮)।
ড. আবদুল্লাহ হারুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী (নিজস্ব সরাসরি পর্যবেক্ষণ দ্বারা নিরূপিত), ২৭ ধরনের প্রাণী নিঃসৃত তেলে আবৃত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাঙ, ১৭টি সাধারণ পাখি (বক), দুটি কুমির, দুটি গুইসাপ, একটি ভোঁদড়ের শরীর তেলে আবৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া ছয়টি ব্যাঙ, চারটি সাপ, চারটি কাঁকড়া, দুটি ভোঁদড়, একটি গুইসাপ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় (চৌধুরী, ২০১৫: ২৪-২৫; টেবিল ৬)।
আবদুল্লাহ হারুনের প্রতিবেদনের সবচাইতে বড় দিক, এতে জীবজন্তুর ওপর তেল নিঃসরণের প্রভাব নিরূপণের ক্ষেত্রে বাস্তুতান্ত্রিক ও স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্ব পেয়েছে; শুধুমাত্র প্রাণীগুলোর গায়ে তেল লেগে থাকার বিষয়টিই বিবেচিত হয়নি। যেমন: জলজ জীবের সংখ্যা কমে যাওয়া, প্রজননক্ষমতা কমে যাওয়া, আবাসস্থল নষ্ট হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুবিধা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে (পূর্বোক্তঃ ২৬)।
শেষ কথা
খসড়া প্রতিবেদন দুটিতে উঠে আসা গবেষণা ফলাফল তুলনামূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট যে তেল নিঃসরণের প্রভাব নিরূপণে ইউএনডিপির গবেষকদল ও অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন গবেষকদলের অবস্থান দুই রকম। ইউএনডিপির গবেষকদল যেখানে প্রভাব নিরূপণের ক্ষেত্রে অনেক কোমল ও দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান নিয়েছে, সেখানে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুনের নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন গবেষকদল প্রভাব বোঝার ক্ষেত্রে অনেকটা স্পষ্ট ও কঠোরভাবে ক্ষতির বিষয়টিকে বিস্তৃতভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। এই পার্থক্য গড়ে উঠেছে মূলত দুই কারণে। প্রথমটি ঘটেছে গবেষণা পদ্ধতির ভিন্নতার জন্য, যা শুরুতেই আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো অনেকটাই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক। কেননা ইউএনডিপির গবেষকদলের কর্মপরিসর/পরিধি নির্ধারিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্তৃক। এই কর্মপরিসরে প্রভাব/ক্ষতি নিরূপণের চাইতে এ ধরনের সংকট ভবিষ্যতে মোকাবিলায় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্য কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তা মূলত নির্ধারণ করা। ফলে তাদের প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনায় ঐ বিষয়গুলোই গুরুত্ব পেয়েছে। যেমনÑতারা ০-১৮ মাসব্যাপী বিভিন্ন রকম কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে। এমনকি এক বছরের মধ্যে বাদাবন পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত ঢাকায় একটি ওয়ার্কশপ আয়োজনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে (ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইউনিট, ২০১৫ঃ ৮২)। তবে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সুন্দরবনের ওপর দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের আয়োজন করা। এ ধরনের প্রস্তাব সুন্দরবনকে ঘিরে দাতাগোষ্ঠী ও আমলাতন্ত্রের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
উপরন্তু সরকারের আমন্ত্রণে তেল নিঃসরণের প্রভাব নিরূপণের কাজটি করার সবচাইতে দুর্বল দিক হলো মত প্রকাশে স্বকীয়তা এবং স্বাধীনতার অনিশ্চয়তা, যার প্রতিফলনই ঘটেছে ইউএনডিপির গবেষকদলের খসড়া প্রতিবেদনটিতে। এটা মূলত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নির্দিষ্ট গবেষণা পরিধির ওপর নির্ভর করে তৈরি করা এক রকমের কনসালট্যান্সি প্রতিবেদন। সেদিক থেকে স্বাধীনভাবে করা গবেষণার ফলাফল যে ভিন্ন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আর সেটাই ঘটেছে অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর খসড়া প্রতিবেদনটিতে, যেখানে তেল নিঃসরণের ক্ষতির প্রভাব নিরূপণ অনেক বেশি বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, দাতাগোষ্ঠী বা অন্য কারো অর্থে তাদের গবেষণাটি পরিচালিত হয়নি। এতে তাদের কারো স্বার্থ বা শর্তের ঘেরাটোপে আবদ্ধ হয়ে পড়তে হয়নি। তার চাইতে বড় ব্যাপার হলো সরকাররে তো এই ধরণরে কাজরে জন্য আমন্ত্রন জানানো উচতি ছলিো ইউনস্কেোক।ে কনেনা সুন্দরবন ইউনস্কেো ঘোষতি বশ্বি ঐতহ্যি। ইউএনডপিরি চাইতে অন্তত সুন্দরবন রক্ষায় অধকি গ্রহণযোগ্য জাতসিংঘভূক্ত বশ্বি প্রতষ্ঠিান হলো ইউনস্কেো। তাহলে প্রশ্ন দাড়ায় সরকার ইউনস্কেোকে সম্পৃক্ত না করে ইউএনডপিরি ব্যাপারে এত আগ্রহী হয়েছিল কেন?
১ গবেষকদলের অন্যরা হলেন ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ আলী আকবর, ড. ইফতেখারুল ইসলাম।
তথ্যসূত্র
[ইএনইপি/ওসিএইচএ এনভায়রনমেন্ট ইফনিট, ২০১৫] Joint UNEP/OCHA Environment Unit (2015), `Sundarbans Oil Spill Assessement’, unpublished draft report, Geneva: UNEP/OCHA Environment Unit.
চৌধুরী, আব্দুল্লাহ হারুন (২০১৫), ‘পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের পরিবেশের ওপর তেল নিঃসরণজনিত বিপর্যয়ের প্রভাব’, সর্বজনকথা, প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, পৃঃ ১৮-২০।
ইফতখোর মাহমুদ (২০১৫), ‘সুন্দরবন লড়ছে’, ১ জানুয়ারী, দৈনিক প্রথম আলো
পার্থ, পাভেল (২০১৫), ‘সুন্দরবনে তেল বিপর্যয়: একটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ নমুনা’, সর্বজনকথা, প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, পৃঃ ২৯-৩৪।