April 18, 2024

ফ্রস্ট এবং টমাস

ফ্রস্ট এবং টমাস

“Two roads diverged in a wood, and I—

I took the one less traveled by, And that has made all the difference.”

[ The Road Not Taken, Robert Frost]

“যেখানেই যাও চলে, হয়নাকো জীবনের কোনো রূপান্তর;

এক ক্ষুধা এক স্বপ্ন এক ব্যথা বিচ্ছেদের কাহিনী ধুসর

ম্লান চুলে দেখা দেবে যেখানেই বাঁধো গিয়ে আকাঙ্ক্ষার ঘর!”

[বলিল অশ্বত্থ সেই, জীবনানন্দ দাশ]

ফ্রস্ট এবং দাশের উপরের পঙক্তিগুলো পড়ে মনে হবে তারা দুই মেরুর লোক। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। ফ্রস্টের সংশ্লিষ্ট কবিতাটা লোকে নিজেদের মত অর্থ করেছে । সে জন্য দায়ী ভাষা ও সংস্কৃতি। ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের সংস্কৃতি এবং উপরোক্ত পঙক্তির ভাষা পাঠকের কাছে এমন এক অর্থ তৈরি করেছে যা কবির লক্ষ্য ছিল না। আসলে ফ্রস্ট এই কথাগুলো আন্তরিকভাবে বলেন নাই, বলেছেন কৌতুক করে। এমন দাবী করেছেন David Orr তাই বই ‘দ্য রোড নট টেইকেন…’ -এ।

অরের ব্যাখ্যা বাবদে বলা যায়, ফ্রস্ট এখানে তার ভাষার কাছে হার মেনে গেছেন, হার মেনে গেছেন সংস্কৃতির কাছে। তার বক্তব্য ছিল, মানুষ দুইটি (বা ততোধিক) পথ থেকে একটা নির্বাচন করে, এবং সে পথে সফল হলে সে সেই পথ-নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে বর্তমানের সাপেক্ষে ন্যায্যতা দেয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কবিতা প্রথমদিকে ফ্রস্ট দুইটি যে পথের বর্ণনা দিয়েছেন তাতে মনে হয় না একটি পথ দুইটি খুব ভিন্ন।

কবিতায় ফ্রস্ট বলছেন, যে পথ তিনি নিয়েছেন, যে পথ তিনি নেননি তাদের পার্থক্য খুব বেশি নয়। পথ দুটিকে “really about the same” বলেছেন কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে। আবার তৃতীয় স্তবকে বলেছেন যেই সকালে তিনি সেই পথ দুটির একটি নিলেন সেই সকালে পথ দুইটির অবস্থা একই রকম ছিল সম্পর্কে বলেছেন, “both that morning equally lay/ In leaves no step had trodden black”। তাছাড়া, কবিতার নামটিও লক্ষ্যনীয়, নামটি কিন্তু “দ্য রোড নট টেইকেন”, “দ্য রোড লেস ট্রাভেলড” নয়। ফলে দেখা যাচ্ছে, শেষ দুই লাইনের আগে কবিতাটি একই রকম দুটি পথের কথা বলছে। আর শেষ লাইনদুটি কবি বলবেন অনেক বছর পরে একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে- “I shall be telling this with a sigh/ Somewhere ages and ages hence:” এখানে তার কৌতুকটা উপস্থিত।

ফ্রস্টের জীবন পাঠ করলেও অরের ব্যাখ্যার সমর্থন পাওয়া যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে আগে ফ্রস্ট বিলাতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে কবি এডওয়ার্ড টমাসের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। তারা দুজন বনপথ ধরে হাঁটতে বেরুতেন নিয়মিত। টমাস পথ বিভাজন দেখলে দ্বিধায় ভুগত। তার চরিত্রে এটা ছিল যে চয়েছ দেয়া হলে তার দোমনা ভাব হতো। বিলেত থেকে ফিরে ফ্রস্ট টমাসকে নিয়ে এই কবিতাটি লেখেন।

টমাস এই কবিতার প্রথম পাঠক। কিন্তু তিনি আর সবার মতই কবিতার মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের জয়গান দেখেছিলেন। জবাবে ফ্রস্ট বলেছিলেন, কবিতাটি খুব tricky, অর্থ করার ব্যাপারে তাই সাবধানতা দরকার। টমাস তখন আমেরিকায় আবাস গড়ার কথা ভাবছিলেন, অন্যদিকে ছিল যুদ্ধে যাবার আহ্বান। যুদ্ধের যোগ দেবার ব্যাপারে টমাস আগ্রাহী ছিলেন না। অনেকের অনুমান, এই কবিতাই টমাসকে যুদ্ধে যাবার অনুপ্রেরণা যোগায়। যুদ্ধে টমাস নিহত হন। এই ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তা ফ্রস্টের জন্য দ্বিগুণ বেদনার। কবিতার কৌতুক নির্মম হয়ে যায় তাহলে টমাসের পরিণতির কারণে।

আমেরিকার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের সংস্কৃতি কবিতার শেষ লাইনদুইটির বক্তব্য কবিতার আরসব কথাকে ছাপিয়ে প্রাধান্য দেয়। প্রথমদিককার সমালোচকবৃন্দের পথ ধরে এই কবিতা হয়ে ওঠে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের জয়গান হিসেবে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত বই “The Road Not Taken: Finding America in the Poem Everyone Loves and Almost Everyone Gets Wrong”-এর লেখক ডেভিড অর নিলেন এই কবিতার অনুধাবনের এমন এক পথ যে পথ কেউ নেয়নি, কবিতার নাম ধরেই বলা যায়, দ্য রোড নট টেইকেন। আর তাতেই ভিন্ন কিছু আমরা পেলাম।

সংযুক্তি:  মূল কবিতা

The Road Not Taken

Two roads diverged in a yellow wood,
And sorry I could not travel both
And be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth;
Then took the other, as just as fair,
And having perhaps the better claim,
Because it was grassy and wanted wear;
Though as for that the passing there
Had worn them really about the same,
And both that morning equally lay
In leaves no step had trodden black.
Oh, I kept the first for another day!
Yet knowing how way leads on to way,
I doubted if I should ever come back.
I shall be telling this with a sigh
Somewhere ages and ages hence:
Two roads diverged in a wood, and I—
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference.
-Robert Frost

 

Leave a Reply