October 15, 2024

এই লেখায় আমাদের আলাপ চলবে কবি ও কবিতা নিয়ে। যদিও যে-দুজন কবি নিয়ে আমরা কথা সাজাবো, তারা আদতে ‘কবিতা’ লেখেন না। কবিতা কী, সে সম্পর্কে খুব কম মানুষই সচেতন থাকে; কিন্তু প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কবিতা বা অনুরূপ রচনাদির প্রতি একটা শ্রদ্ধা-মিশ্রিত আকর্ষণ দেখা যায়। অবশ্য ভাষা, শ্রেণী, অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অবস্থান ইত্যাদির হেরফেরে আকর্ষণের গুণ ও মাত্রাগত ভিন্নতা খুব সাদা চোখেই পড়া যায়। আমরা এই আলোচনায় অতটা বিস্তারে যাবো না। কেবল দুজন কবির কবিত্বের প্রকৃতি আর কর্মকাণ্ড চেখে দেখবো। কাব্য না-করেও এ-দুজন যেহেতু আমাদের কাছে ‘কবি’ অভিধা পাবেন, সেহেতু ‘কবি’ ও ‘কবিতা’-র এক ধরনের সংজ্ঞায়নের মধ্য দিয়েই আামাদের যেতে হবে। আর প্রসঙ্গত থাকবে ঢাকার ‘শিক্ষিত’ মধ্যবিত্ত কবিকুলের চর্চা সম্পর্কে দু-একটা বিচ্ছিন্ন মন্তব্য।

কবি-দুজনের একজন শচীশ। প্রণেতা মহর্ষি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘চতুরঙ্গ’ নামে রবীন্দ্রনাথের যে ছোট্ট উপন্যাস ১৯১৬ সালে বের হয়েছিল, তাতে আমরা শচীশকে পাবো। অন্যজন ব্র্যান্ড। নাট্যকার ইবসেন প্রণীত ‘ব্র্যান্ড’ নাটকে তাকে একজন অত্যন্ত সক্রিয় মানুষ হিসাবে দেখা গেছে। তাহলে আমাদের দুজন কবিই মনুষ্য-নির্মিত। এতে ভালোই হবে। পড়ার জন্য টে·টকে বেশ সংক্ষিপ্ত আর গোছানো পাওয়া যাবে। রক্ত-মাংশের কবিকে পড়তে গেলে ‘অকবি’ অংশকে বেছে বাদ দেয়ার দরকার হয়। কাজটা কঠিন। হয়তো-বা অসম্ভব। সে তুলনায় আমাদের এই দুই কবির ‘আইডিয়েল’ কবিত্ব পাঠ করা অনেক সহজ হবে। কার্যকরও হতে পারে।

আগেই বলে রাখি, আমাদের ধারণা : কবি হিশাবে ব্র্যান্ড বেহেতর। কিন্তু আমরা শুরু করবো শচীশকে দিয়ে। আমাদের দেশি কবি বলে নয় (শচীশ দেশি কবি তো?), নিজের পরিচয় হিসাবে সে ‘কবি’ কথাটি ব্যবহার করেছে বলেই। বন্ধু শ্রীবিলাসের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় শচীশকে এই পরিচয়ে গৌরবান্বিত হতে দেখি : ‘শচীশ অম্লান মুখে বলিল, আমি কবি’ (চতুরঙ্গ, শ্রীবিলাস ২)। এই কবি নিশ্চয়ই পদ্যকার নয়। কারণ, শচীশের মধ্যে পদ রচনার কোনো কোশেশ চোখে পড়ে না। তাহলে সে নিজেকে কবি বলছে কেন? সংক্ষেপে একবার দেখে নেয়া যাক, শচীশ আসলে করেটা কী?

উপন্যাসের প্রাঙ্গণে আবির্ভাব-মুহূর্তেই আমরা শচীশকে পরিপূর্ণ মূর্তিতে সমাসীন দেখি। জ্যাঠামশাই তার পরিপূর্ণতার এক প্রান্ত, অন্য প্রান্ত নিশ্চয়ই জন্মগত প্রাপ্তি – নিছক চেষ্টা-চরিত্র এরূপ মহিমাময় হয়ে ওঠার কারণ হিসাবে মোটেই যথেষ্ট নয়। এই ‘অসাধারণ’ শচীশ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নীরত থাকে এক গভীর অনুসন্ধানে। সে চিন্তাশীল, তৎপর, গ্রহিষ্ণু আর নিজের সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে চরিত্রবান। জীবনকে অন্বেষণ করে সে, জানতে চায় জীবনের সাফল্য-সার্থকতার মূল মন্ত্র। আর জানতে চাওয়ার অনুকূলেই তার যাবতীয় সংগ্রাম-সাধনা।

শচীশের এই সাধনার প্রথম ধাপ স্বোপার্জিত নয়, বরং জ্যাঠামশায়ের অনুকৃতি। দ্বিতীয় ধাপ স্বেচ্ছাকৃত হলেও লীলানন্দ স্বামীর ছায়া ব্যতিরেকে তার পৃথক রূপ দৃষ্টিগোচর হয় না। প্রধানত দামিনীর জীবনমুখ্য প্রণোদনা ও অভিঘাতে শচীশ সাধনার ‘সহজতর’ পথ থেকে ‘উচ্চতর’ ধাপে উন্নীত হয়। ‘শ্রীবিলাস’ অধ্যায়ে এ প্রসঙ্গে শচীশের মনোভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে এভাবে : ‘সহজকে কিসের দরকার? ফাঁকিই সহজ, সত্য কঠিন।’ (‘চতুরঙ্গ’, শ্রীবিলাস ২)

শচীশ এই কঠিনের সাধনা করেছে। এবং শেষ পর্যন্ত সেই সাধনায় তার সিদ্ধিলাভ ঘটেছে। কী সেই সিদ্ধির রূপ? লীলানন্দ স্বামীর পরিচয়-জ্ঞাপনার্থ এক স্থানে বলা হয়েছে : ‘যারা দলচরের জাত মানুষকে পাইলে সত্যকে পাওয়ার চেয়ে তারা খুশি হয়।’ এই বাক্যটি বিপরীতক্রমে শচীশের সাধনাকে চিহ্নিত করে। শচীশের সাধনা ব্যক্তিগত সাধনা – ব্যক্তিত্ব অর্জনের সাধনা। তাই এমনকি তার গুরুরও আর প্রয়োজন নেই। কারণ : ‘আমার অন্তর্যামী কেবল আমার পথ দিয়াই আনাগোনা করেন – গুরুর পথ গুরুর আঙিনাতেই যাওয়ার পথ।’ শচীশ এই অন্তর্যামীকে চিহ্নিত করে তাকে চিনে নেয়ার সাধনাই করেছে। এর ফলেই দাঁড়িয়েছে তার ‘কবি’ পরিচয়টি। এই কবি নিঃসন্দেহে নতুন জীবনবোধ আর জীবনাচারের আবিষ্কর্তা।

শচীশের নিজের বর্ণনা মোতাবেক কোনো সাধারণ (common) ভগবানের পরিবর্তে এক ব্যক্তিগত ‘আমার ভগবান’-ই তার উদ্দিষ্ট। আমরা পরে দেখবো : ‘আমার ভগবান’ অন্বেষণের এই আকাক্সক্ষা অনেকটা ইবসেনের ‘ব্র্যান্ড’ নাটকের নায়ক চরিত্রের মতো। কিন্তু বলতেই হবে, ব্র্যান্ডের জীবন-বাজি-রাখা সংগ্রামী সাধনা ও সুস্পষ্ট প্রাপ্তি শচীশে পাওয়া যায় না। শচীশ একদিকে সংসারে লগ্ন নয়, বৃহত্তর মানবসমাজে লিপ্ত নয়; অপরদিকে তার সাধনার পথ অস্পষ্ট, আর প্রাপ্তিও অনেকটা অপ্রকাশিত। হয়তো শচীশের এই সীমা ঔপনিবেশিক সমাজে গড়ে ওঠা মধ্যবিত্তেরই লক্ষণ স্বয়ং কবি রবীন্দ্রনাথও এ ধরনের সীমার মধ্যে ক্রিয়া করেন।

হ্যাঁ, ‘ক্রিয়া’ কথাটাকে আমরা এখানে বিশেষভাবে গুরুতর করে তুলতে চাই। কবির যে-সাধনা তা ব্যক্তিগত তো বটেই; সেই সাধনার প্রকাশভঙ্গি ব্যক্তিগত নানা মুদ্রায় স্বতন্ত্র তো হবেই; কিন্তু তা ক্রিয়া করে কিনা, কিংবা করলে কতটা বিস্তারে আর গভীরে সঞ্চারিত হবার ক্ষমতা ধরে, তার বিচারই হয়তো এক-অর্থে কবি ও কবিতার ‘বড়ত্বে’র বিচার। এদিক থেকে আমরা দেখবো, শচীশের সাধনার ফল ফলেছে। ‘কবিতা’ না করলেও তার তহবিলে বাণী জমেছে, আর সেই বাণী কাজ করে গেছে প্রত্যক্ষত দামিনীর জীবনে, পরোক্ষভাবে হয়তো আরো অনেকের।

কবির কাজ কী Ñ এ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের একটা সাক্ষ্য এখানে নিয়ে রাখা যায়। ‘চিত্রা’ কাব্যের ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায় কবি প্রসঙ্গত ‘কবি’র কাজ এবং জনসমাজের সঙ্গে তার সম্পর্কটি বিশদ করেছেন :

এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে
দিতে হবে ভাষা – এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে
ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা – […]
সে বাঁশিতে শিখেছি যে সুর
তাহারি উল্লাসে যদি গীতশূন্য অবসাদপুর
ধ্বনিয়া তুলিতে পারি … ইত্যাদি।
লক্ষণীয়, সংসার-সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় নিজেকে ভর্ৎসনা করলেও শেষে সংসারে এসে যে কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন কবি, তা কিছুতেই ‘সাধারণ’ মানুষের ঘর-গেরস্থালি নয়।

কবির কাজের দৌড় ‘বাঁশি বাজানো’ পর্যন্ত কিনা, সে সম্পর্কে বিস্তর বাদ-প্রতিবাদ কাব্যলোকে জাহির আছে। আমরা সেদিকে যাবো না। আবার, প্রমথ চৌধুরীর মতো বাঙালি বিদ্বানের মধ্যে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের আধা-‘কাম’বাদী সাহিত্যতত্তে¡র বিপরীতে পুরো নিষ্কাম কাব্যতত্ত¡ প্রচার করেছেন, কিংবা তিরিশের কবিদের মতো যাঁরা রবীন্দ্র-কাব্য আলোচনার ছলে রবীন্দ্র-সাহিত্যের ‘কাম-ক্রিয়া’ পুরোপুরি অনালোকিত রেখে নিষ্ক্রিয় ‘দর্শন’ আর মনোরম কাব্যকৌশলের ফিরিস্তি দিয়েছেন, তাদের মনোলোকের সুলুক-সন্ধানের ফুরসৎও আমরা এখানে নেবো না। আমাদের জন্য এখানে কেবল এটা মনে করিয়ে দেয়াই যথেষ্ট হবে যে, ঔপনিবেশিক কলকতায় মধ্যবিত্তের জনবিচ্ছিন্ন গঠন এবং পশ্চিমা বুর্জোয়া সমাজের সীমিত অনুকারী নৈতিকতাই রবীন্দ্রনাথের সিদ্ধান্তের মূল। শচীশের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখি।

শচীশ বাণী নির্মাণ করেছে এবং সেই বাণী বিতরণও করেছে। তার কাছে দামিনীর চাওয়াটি গভীর মনোযোগ দাবি করে : ‘তুমি আমাকে এমন কিছু মন্ত্র দাও, যা এ সমস্তের চেয়ে অনেক উপরের জিনিস …।’ দামিনী যে ভাবলোকে আর বাণী-লোকে বসতি করে, তার কাছে তা আর যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। দরকার নতুন কিছু। ‘কোনো এক নতুন কিছুর আছে প্রয়োজন।’ তাই নতুন সময় আর নতুন চাহিদার বাণীরূপ নিয়ে আবির্ভূত হয় শচীশ।

শচীশ যখন বলে : ‘আমার কাজ অন্যত্র’, তখন বুঝতে পারি তার কাজ আছে, কিন্তু তা শ্রীবিলাসদের মতো নয়। দামিনীর সাক্ষ্য থেকে বুঝি : শচীশের কাজ শ্রীবিলাসদের জীবনে ফলপ্রসূ হয়ে উঠেছে। আর দামিনী যখন বলে : ‘সুন্দরকে মারিতে গিয়াছিল, তাই অসুন্দরটা বুকে লাথি খাইয়াছে’ – তখন বুঝতে পারি, শচীশ নিত্য-সংসারে দামিনী-লগ্ন হওয়ার নয়। সে সুন্দর এবং দামিনী বা দামিনীদের জন্য সুদূর সৌন্দর্যের আশ্বাস। এই সুদূরতা তৈরি হয়েছে শচীশের সাধনা থেকে, আবার সাধনাই তাকে লগ্ন করেছে দামিনী-শ্রীবিলাসের – নিজের কর্মক্ষেত্র হিসাবে।

এক-অর্থে শচীশ তো একজন জ্ঞানী মানুষ। জ্ঞানী কে? যে ব্যাখ্যা তৈরি করতে পারে। চারপাশের অজস্র বিশৃংখলার মধ্যে যে শৃংখলার সূত্র দেখিয়ে দিতে পারে। যে পথের সন্ধান দ্যায়, দিশা জোগায়। জ্ঞানী তো নতুন বাণী যোগাতে পারে বলেই জ্ঞানী। কবিও তো এই কাজটিই করে। যদিও কবিতার বাণীর পৃথক সুস্পষ্ট ধরন আছে। অন্তত আমাদের কাছে। কিন্তু নতুন বাণীর ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গিয়ে, নতুন বাণীর সঙ্গে জনগোষ্ঠীর সম্পর্ককে পুরোপুরি চেপে গিয়ে, কেবল বলার ধরনটিকে কবিতা বলে চালালে কতটাই-বা আর বলা হয়। প্রাচীন ভারতে জ্ঞানী-মাত্রকেই যে কবি বলা হতো, তা কেবল নিগূঢ়ভাবে সারবানই ছিল না, কার্যকরীও ছিল।

ব্র্যান্ড এক বিবেচনায় শচীশ থেকে পৃথক। সে শচীশের মতো ‘অসাধারণ’ নয়। এক সাধারণ পুরোহিত সে। গ্রামের সাধারণ কৃষকের সঙ্গে তার উঠবস। কিন্তু অন্য দিক থেকে সে শচীশেরই সমধর্মী। ‘সত্য পথ’ অšে^ষণের এক কঠিন সাধনায় রত, ‘সত্য কাজে’ দ্বিধাহীন, আর নিজের অনুভূতি-উপলব্ধির ব্যাপারে দৃঢ়চিত্ত। পথে সে নেমেছে পথের সন্ধানে। পথের এই সন্ধান ব্র্যান্ড মৃত্যু অবধি অব্যাহত রেখেছে। আর ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে ‘পথ’ এবং ‘কাজ’ একই বস্তু, কেননা নিজের জীবন ও প্রাণকে সম্পৃক্ত না করে কোনো অন্বেষণে তাকে নীরব দেখা যায়নি। তার মানে ব্র্যান্ডের পথ ঠিক ‘দর্শন’ নয়, জীবনেরই নামান্তর মাত্র। যে-সব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে জীবন আজ মৃতপ্রায়, শুষ্ক প্রান্তরের সামনে ভিক্ষার হাত বাড়িয়ে ঝুঁকিহীন প্রচলিতের আরামে গা-ভাসানো যে-জীবন, তার বিপরীতে ব্র্যান্ডের কঠিন তপস্যা। গন্তব্য জানা নেই তার, এ কারণেই তার ‘পথ’ বড়ই খাঁটি বস্তু।

পথে পরিক্রমণশীল ব্র্যান্ড দ্বিতীয় অঙ্কেই নিজের প্রকৃত পরিচয়লিপি মুদ্রিত করে দেয় দর্শকের মনে। প্রথমবার একটি মুমূর্ষু আত্মকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজের জীবন বাড়ি রেখে ব্র্যান্ডে প্রমাণ করে : তার কাছে সত্য-সন্ধান জীবনের মতোই বা জীবনের চেয়েও মূল্যবান। আর দ্বিতীয়বার নিজের মায়ের মৃত্যুকালীন অনুশোচনার জন্য দেয়া শর্তে চুল পরিমাণ ছাড় না দিয়ে ব্র্যান্ড নির্দিষ্ করে দ্যায় তার নিয়তি-প্রাপ্ত বা প্রাপ্তব্য সত্যের খাতিরে তাকে জলাঞ্জলি দিতে হবে পৃথিবীর আর দশ দিক। এই একরোখা জীবন-সাধনার মধ্যে ব্র্যান্ডের আরো দুটি বিশিষ্টতা আমরা চিহ্নিত করবো, যেগুলো শচীশের মধ্যে অনুপস্থিত। একটি হল তার সংসার-লগ্নতা, অন্যটি হল নিজ লোকালয় বা জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব নেয়া। স্ত্রী এবং সন্তান সহ বেশ দায়িত্বশীল সংসারই যাপন করেছে সে। যদিও সংসার তার চূড়ান্ত লক্ষ্য কখনোই ছিল না। অনেকটা রামকৃষ্ণ পরমহংসের সেই উপদেশের মতো-সংবাদে থাকতে হবে হাঁস যেভাবে পানিতে ভাসে সেভাবে, পারে উঠে গা ঝাড়া দিলেই পানির চিহ্ন শেষ। হয়তো থাকবে স্মৃতি, থাকবে অভিজ্ঞতা। ব্র্যান্ডেরও ছিল। তার ‘পথ’- যে সংসারলগ্ন এবং বস্তুপৃথিবীর কোল ঘেঁষেই খানিকটা সুদুর হয়ে এই সত্যের ব্যাপ্তি, অ্যাগনেসের সঙ্গে যাপিত অনতিদীর্ঘ সংসারজীবনই সম্ববত তার প্রমান সূত্র।

প্রথম দিকে ব্র্যান্ডের কাছে তার নিজের লোকালয়ের আলাদা কোনো গুরুত্ব ছিল না। ধর্মীয় ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র হয়ে ওঠে কোনো কোনো স্থান : এর বাইরে পৃথিবীর মাত্রই ধর্মপ্রচারকদের কর্মস্থল-কর্মজীবনের শুরুতে ব্র্যান্ডের এরকমই ধারণা ছিল। কিন্তু ক্রমশ সে গ্রহণ করে এক অমোঘ সিদ্ধান্ত-প্রায় অপরিবর্তনীয়; এমনকি প্রাণপ্রিয় একমাত্র সন্তানের জীবন বাঁচানোর জন্যও এই সদ্ধান্তের অন্যথা করেনি সে। সিদ্ধান্তটি ছিল : নিজ লোকালয়ে বসত করা, আর সেই জনপদের মানুষদের জন্য কাজ করা। এর মধ্যে দায়িত্ব নেয়ার একটা ব্যাপার আছে, এবং তা সার্ত্রীয় অর্থেই। কিন্তু এর প্রকৃতি তাৎপর্য সম্ভবত আরো গভীর ও সদূর। আগেই বলেছি, ব্র্যান্ড পাশ্চাত্য দর্শনের মতো কোনো তৎপরতা-বিযুক্ত তত্ত্ব করতে চায়নি। কার্যত, নিজেকে এবং অন্যকে সে জীবনযাপনের মধ্যেই ‘সত্য’ রূপে ক্রিয়াশীল দেখতে চেয়েছে। ফলে তার ‘পথ’ বা ‘সত্য’ আবশ্যিকভাবে প্রথমে ‘বিশেষ’ হয়েই কেবল ‘নির্বিশেষ’ সার্বজনীনতায় উপনীত হতে পারে। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম, দর্শন বা চিন্তাসমূহের ক্ষেত্রে এই স্থানিক ইতিবৃত্ত অবশ্যই রিচার্য। যেমন : ইসলাম বিশেষভাবে আরব দেশীয় ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ইউরোপীয়, দার্শনিক হেগেল জর্মনদেশীয়-ইউরোপীয়-খ্রিস্টান, মহাত্ম মার্কস শিল্পবিপ্লব সমাপ্ত হওয়া দেশসমূহের, ইত্যাদি। অবশ্য স্থানিক বাস্তবতা অতিক্রম করে এই চিন্তাসকল কীভাবে বৈশ্বিক বা সার্বিক হয়ে ওঠে কিংবা আদৌ কতটা সার্বিক হওয়া সম্ভব, তা ভিন্ন বিবেচনার বিষয় : বস্তুত, বিশেষ স্থান ব্র্যান্ডের কাছে এক দিকে ‘বিশেষ’ এর মূর্ত রূপ, অন্যদিকে ‘ভাষা’-র অব্যাহত জোগানদার।

ভাষা? হ্যাঁ, ব্যাপক সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ব্র্যান্ড বিদ্যমান ‘ভাষা’-র বদলে ঐ লোকলয়ের বাসিন্দাদের জন্য, কিংবা হয়তো-বা বিশ্বমানবের জন্য, পেতে চেয়েছিল এক নতুন ‘ভাষা’। বিদ্যমান মানব-সম্পর্ক ও উৎপাদন-সম্পর্ক, বিশ্বাস ও আচার,ম জীবন-ধারণ ও কর্মপদ্ধতি-সবকিছুই বর্তমান ‘ভাষা’র জনপ্রিয়তা। এই ভাষার পরিবর্তন-প্রস্তাব আসলে এক বৈপ্লবিক অভীপ্সা। প্রথমদিকে ব্র্যান্ডের মনে এই অভীপ্সাটুকুই কেবল ছিল। অধিপতি শ্রেণী যে-ভাষা ব্যবহার করে বজায় রাখছে ক্ষমতা ও শোষণের শৃক্সখল, আর তেজহীন, কালপ্রবাহে ভোঁতা হয়ে যাওয়া যে-ভাষায় বুঁদ হয়ে, ব্র্যান্ডের মতে, অর্থহীন দিনযাপন করছে আম-জনতা, তাতে তুষ্ট হতে না পারাটাই তাকে বিপ্লবী বানিয়েছে। জীবনের সাপেক্ষে শব্দ তথা ভাষার প্রকৃত অর্থ অন্বেষণে সদাসর্বদা সজাগ আর তৎপর ছিল বলেই, তার কাছে ক্রমশ নিগূঢ় তাৎপর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে শব্দমালা। এই ক্ষেত্রে তার শিক্ষক জীবন স্বয়ং; তার অবলম্বন বিদ্যমান ভাষা ও রূপকল্প, আর অ্যাগ্নেস, আইনার, পুরোহিত, ডাক্তাত, কৃষক, গার্ড কিংবা নামহীন গোত্রহীন ব্যক্তিসকল পুরো এক জীবন ধরে বিচিত্র অনুষঙ্গে তার সামনে প্রতিভাত করে নতুন অর্থ, নতুন তাৎপর্য-এক একটি পুরানা, মরচে-পড়া মুদ্রাকে ফিরিয়ে এনেছে ঝকঝকে নিকষিত ধাতুর মতো। প্রথম অঙ্কে বন্ধু আইনারকে দুটি জরুরী উপদেশ দিয়েছিল ব্র্যান্ড :

সত্যকে মিথ্যের থেকে
শিখো দেখতে ভিন্ন করে। জীবনই আসল শিল্প ভুলো না একথা

আসলে এই দ্বিলক্ষণ ব্র্যান্ডেরই অনতঃসার। সত্য বলে যা প্রতিভাত হয়, তাকে নির্মমভাবে চোখে দ্যাখো, আর শেষ পর্যন্ত জীবনের পক্ষেই থাকা। জীবনই ঘষে ঘষে পরিচ্ছন্ন করে তুলবে এক-একটি জীর্ণ শব্দকে, ধীরে ধীরে পুরানোর মধ্যে প্রতিভাত হবে নতুন তাৎপর্য।

এই কাজ- তো কবির কাজ। ব্র্যান্ড এই অর্থেও একজন মহৎ কবি। ফরাসি কবি মালার্মে একবার বলেছিলেন। কবির কাজ হল জাতির ভাষাকে পরিচ্ছন্ন করা। কথাটিকে আমি এইভাবে বুঝেছি যে, দৈনন্দিন ব্যবহারের আরামের মধ্যে শব্দ বা বাক্য ক্রমশ শিথিল রূপ পরিগ্রহ করে এবং ‘সাধারণ’ ভাবের বাহন হয়ে নিত্যজীবন সহচর হয়। দৈনন্দিনতার মধ্যে যে-মহাজীবন প্রতিফলিত হয় বা অন্তত হওয়ার কথা, অর্থাৎ নিত্যদিনের মধ্যে অনিত্যের যে ছায়া অনিঃশেষ ব্রীড়াবত থাকার কথা, ভাষার সহজ স্বাভাবিক ভাঁজগুলো তাকে আর ধারণ করতে পারে না। কবি শব্দ আর অর্থের অন্তঃ ও আন্তঃসম্পর্কের সমস্ত বিদ্যমানতাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে ভাষার বন্ধ্রেঅনিত্যের ইশারাকে অবারিত করেন এবং পদ-শৃংখলার নতুন বিন্যাসের চটাপে নতুন অর্থের সম্ভাবনা জাগ্রত করেন। মালার্মের মহার্ঘ-উক্তির মধ্যে ‘জাতি’ এবং ‘ভাষা’ শব্দদ্বয়কে ‘বিশেষ’ রূপে পড়লে ব্র্যান্ডের কর্মকান্ডের বৈধতা উপলব্ধি করা সম্ভব হয়।

অন্যভাবে দেখলে, ব্র্যান্ড বরং জর্মন দার্শনিক হেইডেগার-বর্ণিত কবি ও দার্শনিক হেইডেগার ভাষার এক আমূল পরিশোধন এবং অর্থব্যাপ্তি কামনা করেছিলেন। উষালগ্নে উদীয়মান লাল সূর্যের উপর দৃকপাত করে আদি মানব যে-ভাব-বিহ্বলতায় শব্দ উচ্চারণ করেছিল, অথবা নিবিড় অরণ্যে বিপদসঙ্কুল পারিপার্শ্বিকতায় কালযাপনের অকৃত্রিম অভিজ্ঞতাকে যে-রূপ শব্দে সঞ্চিত করেছিল, হেইডেপার হারিয়ে যাওয়া সেই আদি অর্থের পুনঃউদ্বোধন কামনা করেছিলেন। কবি ও দার্শনিকের সাধনা, তাঁর মতে, এই অমলিন অর্থের সাধনা। ব্র্যান্ড যখন বলে, তার কাজ মানুষের ভুলে যাওয়া সত্যকে তুলে আনা-কাজে, শব্দে, ভাষায়-তখন তাকে আমরা হেইডেগারীয় অর্থই একজন কবি-দার্শনিক আকারে আবিস্কার করি, এক আমূল সৃষ্টিশীলতাই যার একমাত্র স্বারক।

এখানে আমরা আমাদের নির্বাচিত দুই কবির পরিচয় শেষ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ছিল : কবি, কবিত্ব আর কবিতা সম্পর্কে বিশেষ আলোকপাত। সেই লক্ষ্য লিখনশৈলীর ঊনতাহেতু হাসিল হয় নাই ভেবে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সিদ্ধান্ত সূত্রাকারে নিচে উল্লেখ করছি।

এক, কবি মাত্রই বিপ্লবী। বিদ্যমান কাঠামোসমূহে ঈমান রাখতে না-পারাই তার বিদ্রোহের হেতু। বেঈমানির মাত্রাই তার বিদ্রোহের মাপ। তাই সে আমূল বিপ্লবী না-ও হতে পারে। কিন্তু প্রচল চিহ্ন-ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন প্রস্তাব ছাড়া কবি কিংবা কবিত্ব অসম্ভব।

দুই, নতুন বাণী কবির প্রধান চিহ্ন। সেই বাণী ‘কবিতা’-আকারে প্রকাশিত না-হলেও ক্ষতি নাই। কিন্তু তাকে আবশ্যিকভাবে ‘নতুন’ হতে হবে, অর্থাৎ ‘ক্রিয়া’ করতে হবে।

তিন, ‘কবিতা’ কবিত্বের এক রূপ মাত্র। হেগেলকে খানিকটা আনাড়িভাবে চুড়ি করে বলতে পারি : চিন্তা বা জ্ঞান যখন রূপকের ছলে বা আড়ালে নিজেকে গোপন রাখে, তখন তাকে বলি শিল্প। শিল্পের এক রূপ সাহিত্য, আর সাহিত্যের এক রূপ কবিতা। অবশ্য, বিশেষ রূপ আকারে কবিতার ¯^াতন্ত্র্য ও কলাকৌশলকে আমরা বিবেচনার বাইরে রাখছি না। শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই : ‘কবিতার ইতিহাস তার টেকনিকের ইতিহাস’ বলে লুই আরার্গ-র নামে যে কথাটি বাজারে চালু আছে, তাতে ‘কবিতা’-কে সম্ভাব্য-হ্র¯^তম আকারে আমলে আনা হয়েছে। টেকনিক কবির জন্য দরকার; কেননা, নতুন বাণী আদতে ভঙ্গি ছাড়া অসম্ভব। তবে অকবির জন্য দরকারটা আরো বেশি। বাণীর অভাবে ভঙ্গিতেই তাকে ভোলাতে হয়।

চার, কবির সংসার- বৈরাগ্য সম্পর্কে যে-বিপুল কিংবদন্তি আছে, তা বাস্তবতার বহিরঙ্গ মাত্র। অন্তরঙ্গে কবিকে হতে হয় সংসারলগ্ন এবং সংসারের নিবিড়তম পাক। নিবিষ্ট পাঠ ছাড়া সংসারের গভীরতর সূত্র-সত্য-শৃংখলা আবিস্কার করা কী করে সম্ভব? এতে করে অবশ্য ছোট সংসার, মানে, পারিবারিক জীবন কিংবা বিদ্যমান শৃক্সখলায় তার উন্নাসিরকতা প্রকাশ পেতে পারে। কিন্ত মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক বড় কবির গোকুলে বেড়ে উঠছে ভাবিকালের নতুন সংসার। আমাদের দুই কবির মধ্যে ব্র্যান্ড সংসার ও সমাজে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল। তবে তাকে নিত্য সংসার, অর্থাৎ, মা-স্ত্রী-সন্তান ও ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মূল্যে কিনতে হয়েছে অনিত্য সংসার। শচীশ অবশ্য সংসারের রূঢ়তার মধ্য দিয়ে না-গিয়ে নিজের কবিত্বের ঋজুতা ও বাস্তবতার অভাবজনিত সঙ্কট তৈরি করেছে। আমাদের ঔপনিবেশিক কালের কবি=যথা, মাইকেল, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ-প্রমুখের কবিত্বে রোমান্স, ফ্যান্টাসি আর রোমান্টিকতার অতি-প্রাবল্যের মূল কারণ, নিজ বাস্তবতার চৌহদ্দি থেকে ‘ইডিওলজি’ ছেঁকে না-নিয়ে পশ্চিমা ঋণ-প্রবাহের উপর অতিমাত্রার নির্ভরতা। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে যে বাস্তবতাবাদী, রাজনৈতিক ও দার্শনিক ক্যাটাগরিতে সাহিত্যচর্চা খুব সামান্যই হয়েছে, তার কারণও আমাদের মধ্যবিত্তের ঔপনিবেশিক উদ্ভব ও খাসিলত। তবুও মাইকেল-বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথের মধ্যবিত্ত সমাজকেন্দ্রিক একটা মিশন ছিল। এ-দিক থেকে তিরিশ এবং তৎপরবর্তী অধিকাংশ কবির অবস্থা বেশ শোচনীয়। টি, এস, এলিয়াটের ওয়েসন্টল্যান্ড পরবর্তী শেষ পর্বের কাব্যচর্চায় সাফল্যগ-ব্যর্থতা-সম্পর্কিত বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু কলকতা ও ঢাকার কবি সমাজ- যে কাব্যচর্চার এই ধরণটাকে আমলেই আনতে পারেনি, তার কারণ সামষ্টিকভাবে বাংলায় চালু থাকা এক হাওয়াই কবিত্বের ধারণা।

প্রভাবশীল ডিসকোর্সগুলোকে দুহাতে সরিয়ে ‘সাদা’ চোখে গভীরে তাকানোর জন্য মেরুদন্ডে জোর লাগে। নিছক ব্যক্তিপ্রতিভায় এতটা জোর সঞ্চয় করা সাধারণত সম্ভব হয় না। প্রয়োজন হয় সামষ্টিক চর্চা আর কালের আনুকূল্য। ‘আধুনিক’ এ-দিক থেকে নজরুল এক তাৎপর্যপূর্ণ ব্যতিক্রম। আমাদের শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ সম্ভবত আংশিকভাবে কালের আনুকুল্যকে ব্যবহার ও ভোগ করতে পেরেছেন।

পাঁচ, প্রকৃত কবিত্বের সঙ্গে ট্র্যাজেডির এক গভীর-গোপন আঁতাত আছে। একদিন সৃষ্টিশীল চিন্তক, সংস্কারক বা শিল্পীর পক্ষে সমকালীন আনুকূল্য লাভ অসম্ভব নয়, তবে বিল ঘটনা। সাধারণত উত্তরকালীন প্রজন্মই পূর্বজ কোনো মহান সৃষ্টিশীলতাকে বুঝে উঠতে পারে এভং সম্যক তাৎপর্য লালন করতে সক্ষম হয়। আর কোনো সৃষ্টিশীলতা যদি সমকালীন ভাষায় আমূল পরিবর্তন দাবি করেন-তা সে মনোজগতের ভাষাই হোক কিংবা শিল্পজগতের ভাষাই হোক কিংবা শিল্পজগতের ভাষা-তাহলে তাঁর স্বীকৃতি আরো বিলম্বিত হয়-হয়তো-বা কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত।

এক অর্থে এই ট্র্যাজেডি ব্যক্তি-কবির, কবিত্বের বা কবিতার নয়। কবি বিদ্যমান সংসারের অন্তলীন ভাবসকলকে আবিস্কার করেন বলে, আগাম ভাবের কারবার করেন বলে, সমকাল তাকে উপেক্ষা করতেই পারে। কিন্তু কালের অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ পরস্পরায় তার সৃষ্টির জয় অবশ্যম্ভাবী।

ছয়, প্রকৃত কবির মধ্যে প্রায়শই বাস করে একজন নবী, যিনি তাঁর জনসমাজের জন্য কিংবা বিশ্বামানবের জন্য পেশ করেন নতুন ধর্ম। ধর্ম- তো কেবল যীশু আর মোহাম্মদ দেননি, দিয়েছেন হোমার-বাল্মীকিরাও। নবিত্ব বলতে পারি কবিত্বের ঐ-অংশকে, যে-অংশ পথকে পরম মূল্য দ্যায়। বিপরীতে, ‘কবি সাধারণত পথকে উপক্ষে করেন’, রচনা করেন মত-মন্তব্য-অনুভূতি-উপলব্ধি, যেখানে সুপ্ত থাকে পথের সঙ্কেত। আমাদের শচীশ আপাদমস্তক কবি, তাই সে সুন্দর, সুদূর আর আকর্ষণীয় ; ব্র্যান্ডের কবিত্বের সঙ্গে মিশেছে নবিত্বের সংগ্রাম, যা তাকে করেছে ঋজু, স্পষ্ট আর ট্র্যাজিক।

থাম্বনেইলের ছবি: ইবসেনের ব্র্যান্ড নাটকের একটি পোস্টার, মরিস ডুমন্ট

Leave a Reply