সিএসআইসি, স্পেনের সবচেয়ে বড় পাবলিক গবেষণা সংস্থা। সে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি র্যাংকিং করেছে। যেসব বিষয় তারা বিবেচনায় নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে প্রেজেন্স, ওপেননেস, ইমপ্যাক্ট এবং এক্সিলেন্স। শীর্ষস্থানটি তারা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে। এ প্রতিষ্ঠানটির ইমপ্যাক্ট ও এক্সিলেন্স অন্য সবাইকে ছাপিয়ে গেছে বলেই এ অবস্থান। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এমআইটি এবং তৃতীয় স্থানে স্ট্যানফোর্ড।
এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ওপরে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি_ স্থান ৫৪।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ৬৩, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ৬৭ এবং হংকং ১১০।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ওপরে রয়েছে ভারতের আইআইটি, মুম্বাই।
আমার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর থেকে এখানে শিক্ষকতা করছি। গবেষণা কাজেও নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করি। এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই। আমার ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাজীবন শেষে কোথায় কাজ করছে সেটাও আমার আগ্রহের বিষয়। আমাদের জাতীয় জীবনে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব অপরিসীম। যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে র্যাংকিং হয় তখন স্বভাবতই নজর চলে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি। সিএসআইসি, স্পেনের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। কিন্তু কোথায় আমাদের নাম! খুঁজতে খুঁজতে পেছনে যেতে থাকি। প্রথম পাঁচশতে নেই, হাজারেও না। আর কত নিচে যাব! দুই হাজার, তিন হাজার, চার হাজার_ কোথাও নেই। শেষ পর্যন্ত অবস্থান চিহ্নিত হলো_ আমরা রয়েছি ৫২০১-এ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমাদের র্যাংকিং ১৭৪।
বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ‘প্রেজেন্স’ বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬৪৬৮ স্থানে, ‘ইমপ্যাক্ট’ বিবেচনায় ১০৫৭৭, ওপেননেস র্যাংক_ ৬২৪৯।
এ সবের তুলনায় এক্সিলেন্স র্যাংকিং যথেষ্ট ভালো_ ১৭৬৭।
কেন সবার শেষে, সবার পিছে আমাদের অবস্থান? প্রতিষ্ঠার সময় ব্রিটিশ শাসকরা বলেছিল, ইম্পেরিয়াল কমপেনসেশন হিসেবেই তারা অনুমোদন দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকায় স্থাপিত হয় প্রাদেশিক রাজধানী। কিন্তু প্রবল আন্দোলনের মুখে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেলে পূর্ববঙ্গে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তা প্রশমনের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। ১৯২১ সালে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। এ নতুন দেশটির প্রতিষ্ঠার পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষার্থীদের অবদান ছিল। ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অগ্রণী ভূমিকায়। ঐতিহাসিক আমতলা ছিল এ প্রতিষ্ঠানেরই প্রাঙ্গণে। এর ১৯ বছর পর ১৯৭১ সালে বটতলা ও কলা ভবন নতুন কীর্তি স্থাপন করে_ স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা তোলা হয় সেখানে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এখানে সূচনার সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের কিছু তুলনা আমি টানতে চাই। ১৯২১ সালে বিভাগ ছিল ১২টি, এখন ৭২টি। শিক্ষক ৬০ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮০৯।
ছাত্রছাত্রী ৮৭৭ থেকে ৪৭ হাজার ৮২৭।
ছাত্রাবাস ছিল তিনটি_ জগন্নাথ হল, এসএম হল ও ঢাকা হল। এখন ১৯টি।
এসবই অগ্রগতির চিত্র। তবে চোখে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে, ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমির পরিমাণ ছিল ৬২১ একর। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬০.৬১৬ একর। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আবাসিক_ পড়তে হলে ছাত্রাবাসে থাকতে হবে। শুরুতে প্রতি ২৯২ জনের জন্য ছিল একটি ছাত্রাবাস। এখন গড়ে ২ হাজার ৫১৭ জনের জন্য একটি ছাত্রাবাস।
আমাদের নিম্নগতি শুধু কি আয়তনে? নাকি আরও অনেক ক্ষেত্রেই আমরা পেছনে চলে যাচ্ছি?
দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৭৪তম। এশিয়ায় অবস্থান আরও অনেক পেছনে। মাত্র অর্ধশত বছর আগেও সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পদচারণা ছিল খ্যাতিমান সব শিক্ষকের_ সত্যেন বোস, বুদ্ধদেব বসু, আর সি মজুমদার, স্যার এফ রহমান, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখের। যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সম্মুখ সারিতে, স্বাধীন দেশে সে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা শুধুু অব্যাহত থাকবে না_ উষ্ণীষে যুক্ত হবে নতুন নতুন স্বর্ণ পালক, এটাই তো প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। কেন ঘটেনি, তার কারণ হিসেবে অনেকেই দায় চাপাতে চায় ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকবে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে, এটাই ছিল এ আইনের লক্ষ্য। এতে উপাচার্য পদটি নির্বাচনের মাধ্যমে করার বিধান রাখা হয়। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও বিষয়টি তেমন পছন্দ ছিল না। তিনি প্রশ্ন রেখেছিলেন_ শিক্ষকরা সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, একাডেমিক কাউন্সিল এবং সর্বোপরি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে এত ব্যস্ত থাকবেন কী করে। তাদের মূল কাজ তো পাঠদান ও গবেষণা পরিচালনা। বাস্তবে আমরা আরও একটি বিষয় দেখছি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় রাজনীতি প্রবলভাবে ঢুকে পড়েছে। অনেক শিক্ষক যতটা না শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণায় ব্যস্ত, তার চেয়ে বেশি মনোযোগ প্রদান করেন দলীয় কর্মকাণ্ডে। অভিজ্ঞতায় তারা নিশ্চিত হয়েছেন, কোনো একটি বৃহৎ দলের সঙ্গে না থাকলে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্তি লাভ অসম্ভব। এমনকি উচ্চশিক্ষার সুযোগ লাভের জন্যও এ ধরনের আনুগত্য প্রদর্শন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যখনই দেশের ক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটে, দ্রুততার সঙ্গে বদলে যান উপাচার্য। এ জন্য কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করার নজিরও আমরা বারবার দেখছি। ক্রমে পরিবর্তন আসে অন্যান্য পদে এবং কারা কোন পদে আসবেন, সেটা আগে থেকেই নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা কেবল একটিই_ দলীয় সমর্থকদের মধ্যে একই পদে একাধিক দাবিদার থাকলে কোন্দল অনিবার্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং ইউনিভার্সিটি এবং একই সঙ্গে এখানে গবেষণাও পরিচালিত হতে হবে। কিন্তু শিক্ষকদের যদি ব্যস্ত থাকতে হয় প্রশাসনিক ও অন্যান্য পদ পাওয়ার জন্য লবিং-গ্রুপিংয়ে, তাহলে গবেষণার জন্য সময় মিলবে কোথায়? যারা এভাবে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন তারা এ কারণে যুক্তি দেখান_ টিচিং ইউনিভার্সিটিই তো ভালো। তারা ক্লাস রুমে লেকচার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করতে চাইছেন। তাতে দায় কমে বটে, কিন্তু দায়িত্ব পালিত হয় না। শিক্ষকরা গবেষণা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাবেন, সেজন্য তহবিল বরাদ্দও অপর্যাপ্ত। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখি, উপাচার্য কিংবা সমমানের পদে নিযুক্তি লাভের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে তার সম্পদ সংগ্রহের ক্ষমতা। এটা মানবসম্পদ ও অর্থ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থের প্রধান উৎস সরকারি বরাদ্দ। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নয়, বরং সরকারের কাছ থেকে কে কত বেশি অর্থ নিয়ে আসতে পারেন সেটা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবেচিত হয়। যারা উপাচার্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান, তারা সর্বদা খেয়াল রাখেন সরকার যেন কোনোভাবেই নাখোশ না হয়। তাতে নিজের লাভ হতে পারে, তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয় এবং তার মাত্রা ব্যাপক। এভাবে বিসর্জন দেওয়া হয় স্বায়ত্তশাসন। সম্পদের প্রধান জোগানদাতা যখন সরকার, তখন তারা কেবল সম্পদ ব্যয়ের ওপর নয়, আরও নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তার সাবেক শিক্ষার্থীদের জানিয়েছে, তাদের হাতে এত অর্থ রয়েছে যে আপাতত নতুন অর্থের প্রয়োজন নেই। সিএসআইসির তালিকায় শীর্ষস্থান কি আর এমনি মিলেছে!
বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হলে সরকারের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী থাকার দরকার পড়ে না। জর্জ বুশ কিংবা বারাক ওবামা কিংবা অন্য কে ক্ষমতায় সেটা ওই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের ভাবতে হয় না। তারা ব্যস্ত থাকেন নিজেদের আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে।
বাংলাদেশে ছাত্রছাত্রীদের দলীয় রাজনীতিও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পেঁৗছেছে। ছাত্ররাজনীতি আর দলীয় রাজনীতি যে এক নয় সেটা অনেকেই বুঝতে চাইছে না। রাজনীতি না করলে ছাত্রাবাসে আসন মেলে না। তবে অবশ্যই থাকতে হবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে। ছাত্ররা রাজনীতি শিখছে কি-না, সেটা বড় নয়_ জিন্দাবাদ দিলেই হলো। শিক্ষকরাও তাতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হলো_ এ পাকচক্র থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী? আমি কয়েকটি বিষয় বলব_ এক. ১৯৭৩ সালের আইনের পর্যালোচনা। উপাচার্য নিয়োগ করার জন্য আন্তর্জাতিক সার্চ কমিটি চাই। যিনি আবেদন করবেন তিনি দায়িত্বে থাকাকালে কী করবেন তার রূপরেখা দেবেন। অর্থ কীভাবে সংগ্রহ করবেন এবং ব্যয়ের খাত কী কী, সব স্পষ্ট করে বলবেন। কমিটিতে বাংলাদেশের লোক থাকবে, বাইরেরও থাকতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে যে উপাচার্য নিয়োগের জন্য যে বিধান করা হয়েছে, সেটাও মানা হয় না। সরকারের মনোনয়নেই উপাচার্যরা দায়িত্ব পালন করে যান বছরের পর বছর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাড়ে চার বছরের বেশি ছিলেন অনির্বাচিত। একেবারে শেষ সময়ে এসে ‘নির্বাচিত’ হলেন সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে। অন্যরা নেই কিংবা অনুপস্থিত।
দুই. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা চলে না। তারা শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশ্বের সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন কিংবা গবেষণা করেছেন, অনেকে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন। এখানে মেধার ঘাটতি, সেটা বলা যাবে না। কিন্তু কাঠামোগত ত্রুটির কারণেই তারা নিজেদের যোগ্যতা-দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতেও অনেকের অনাগ্রহ। ৫২০১ নম্বরের প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে যদি ১০০ বা ২০০ নম্বরে থাকা প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ আসে, সেটা গ্রহণ করাই ভালো নয় কি!
আমরা এমন একটি নিয়ম করতে পারি, যাতে দেশ-বিদেশের সেরা শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রতিটি বিভাগে অন্তত ৫ শতাংশ শিক্ষক নিতে হবে, যারা কাজ করছেন দেশের বাইরে। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অগ্রাধিকার প্রদান করা যায়।
তিন. ক্লাস রুম, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, ছাত্রাবাস সংখ্যা বাড়ানো, গ্রন্থাগার ও ইন্টারনেট সুবিধা_ এ সবের প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী ৪৭ হাজারের বেশি। এখানে অবকাঠামো সুবিধা অপ্রতুল, কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের চিত্র আরও শোচনীয়। জোর করে কাউকে জ্ঞানের রাজ্যে স্থান করে দেওয়া যায় না, এটা অবশ্যই বুঝতে হবে।
চার. বিশ্বায়নের যুগে শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে ব্যাংক, উদ্যোক্তা এবং সংশ্লিষ্ট আরও অনেককে যুক্ত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পড়াশোনায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে ব্যাংক। কর্মসংস্থানের জন্য পাশে দাঁড়াবেন উদ্যোক্তারা। এ ধরনের সুবিধা যত সৃষ্টি হবে, মাস্তানি-সন্ত্রাস ও দলবাজি তত পিছু হটবে।
সবশেষে বলব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কী করে হারিয়ে গেল, সেটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। কেউ জমি বিক্রি করেছে, সেটা শোনা যায়নি। তাহলে এত বিপুল পরিমাণ জমি কার কার দখলে গেছে?
আমরা চাই, আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি আগামী এক দশকের মধ্যে সেরা ১১০ না হোক, অন্তত ২০০টির তালিকায় আসুক। এটা যারা করতে পারবেন, তারা এগিয়ে আসুন পরিকল্পনা নিয়ে। এর বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের ভবিষ্যৎও কিন্তু উজ্জ্বল।
প্রথম প্রকাশঃ দৈনিক সমকাল (২৬/০৮/২০১৩)
Thank u sir 4 ur excellent writing.
All of us should empty our mind and fous on our goal, sir.
আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। পড়াশোনা শেষ করে বেরিয়েছি খুব বেশি দিন হয় নি।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এই বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা, গবেষণা, দেশ ও জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে দিকনির্দেশনাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের দিক থেকে আরো এগিয়ে যেতে হবে। নিত্য-নতুন গবেষণাকর্ম এবং জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। জ্ঞান কি শুধু পাশ্চাত্য দেশগুলোতেই আবিষ্কৃত হবে? আমাদের দেশে কি আমরা নিত্য-নতুন তত্ত্ব সৃষ্টি করতে পারি না? এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই।
এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, সচেষ্ট এবং পরিশ্রমী হতে হবে প্রত্যেকটি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালোবাসা এবং শুভকামনা।