March 28, 2024

http://www.fightforthefuture.org/billboard

বাংলাদেশ ২০০৩ ও ২০০৫ সালের তথ্য সমাজ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্র ও কর্ম কৌশল বাস্তবায়নের অঙ্গীকারাবদ্ধ দেশগুলোর অন্যতম। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি, আইন, বিধি ও কৌশল প্রবর্তন করে বর্তমান সরকারের আমলে এসে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচী গ্রহন করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, জাতিসংঘের পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়েও বাংলাদেশ অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে। অপর দিকে একটি জাতির সম্ভাবনাময় তরুন শক্তির জন্যে সরকারের অনেক পদক্ষেপই অনুপ্রেরনামুলক হয়ে উঠেনি। তার অন্যতম কারন হল ইন্টারনেট ব্যাবহারের শক্তিকে পুঁজি করে জাতীয় উন্নয়নের জন্যে একটি পরিপূর্ণ দিক-নির্দেশনার অনুপস্থিতি। এই অনুপস্থিত নির্দেশনার প্রধান প্রধান পটভূমি তৈরি হয়েছে আমাদেরই কিছু ভুল বা সীমাবদ্ধতার জন্যে, যেমন-

১। যে সব প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগগুলো নেয় সেখানে বাংলাদেশের ক্রমাগত অনুপস্থিতি। আমরা মনে রাখিনা যে এই রাষ্ট্রপুঞ্জ সংস্থাটি আমাদেরই এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এর সদস্য হিসেবে সকল কর্মকাণ্ডের অংশীদার। আমাদের যথাযথ অংশীদারি ভুমিকার অভাবে গৃহীত পদক্ষেপ, আর্থিক বিবেচনা আর অগ্রগতির সূচক বিন্যাসে আমরা ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছি আর এর পরিণতিতে আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারি কর্মকাণ্ডে দুর্বলতার পরিচয় দিচ্ছি যার প্রতিফলন পড়ছে দেশের নীতি গ্রহনে ও বাস্তবায়নে।

২। দেশের অভ্যন্তরে ‘তথ্য প্রযুক্তি নীতি’ ও এর ‘কর্ম কৌশল’ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়নি তার প্রধান কারন এই নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ কর্মযজ্ঞ সরকার নিয়ন্ত্রিত পরিসেবা প্রদানে বিন্যস্ত হয়েছে। ‘উদ্ভাবন’ বলে সরকার যেটাকে দেখছে তা আন্তর্জাতিক রীতি-সংস্কৃতির পরিপন্থী। ‘ডিজিটাল সম্পৃক্তি’ (Digital Inclusion) আর ‘ডিজিটাল উদ্ভাবন’ (Innovation)-কে এক করে ফেলে সরকারী দপ্তরগুলোর কর্মকাণ্ডকে এমনভাবে সামনে এনে ফেলা হয়েছে তাতে তরুণদের একটি বড়ো অংশ মনে ভেবে বসে আছে ‘আমাদের হয়তো আদৌ আর কিছু করনীয় নেই, যা করার তা সরকার করবে!’

অপর দিকে সৃজনশীল তারুন্য বিকাশে আমাদের দুর্বল ইন্টারনেটই একটি বড় অন্তরায়। সরকারকে এটা ভালো করে না বোঝা পর্যন্ত আমাদের হতাশায় থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আমাদের কাছে যে পরিমান ‘ব্যান্ডউইথ’ আছে বা যে উচ্চ গতির ইন্টারনেট আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি তার মুল্য পরিশোধ করেছে এই জাতি। ফলে স্বাভাবিক যে এই ইন্টারনেট পাবার অধিকার এই জাতিরই বেশি। কিন্তু তা না করে সরকার কখনো কখনো চিন্তা করছে বিদেশে ‘ব্যান্ডউইথ’ রপ্তানি করার যা খুব-ই দুর্ভাগ্যজনক! অপরদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রাপ্তির প্রক্রিয়াও এমনভাবে জটিল করে রাখা হয়েছে যে বিটিসিএল-এর অফিসে এসব জানতে গেলে বিস্মিত হ’তে হয়! কাগজে যেসব প্রক্রিয়া বলা আছে তা এতই জটিল যে কোন সৃজনশীল তরুন সহজে এই পথে ইন্টারনেট পেতে যাবে না। কিন্তু বিকল্প কি? সরকার সযতনে ইন্টারনেট দিয়েছে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে যারা উচ্চমুল্যে অত্যন্ত ধীরগতির ইন্টারনেট দেয়।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে সরকারের এই ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণকামী অভ্যস্ততার কারনে আমাদের দেশের কাম্য ‘উদ্ভাবন’ আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হতে পারছে না। যেসব সম্পুরক বেসরকারি সংস্থা সরকারকে নানাভাবে সহায়তা করে বলে প্রচলিত এদের মনঃসংযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বানিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিপ্রসূত ও সরকারের নীতি বাস্তবায়নের চেয়ে তল্পিবাহক হিসেবেই বেশিরভাগ দায়িত্ব পালন করে। ফলে সরকারের পক্ষেও তার নীতিগুলো সম্পর্কে জনমানসের ভাব জানা কঠিন হয়ে পড়ে।

সারা দুনিয়ায় এখন ইন্টারনেট-কে জনগনের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অঙ্গ সংস্থা আইটিইউ আর ইউনেস্কো-র উদ্যোগে বিশ্বের বরেন্য ব্যাক্তিবর্গ সমন্বয়ে ‘ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’ গঠন করা হয়েছে। ২০১০ সালেই এই ব্রডব্যান্ড কমিশন ২০১৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ব্রডব্যান্ড অর্জন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে শতকরা ৪০ ভাগ গৃহস্থালি। এর জন্যে করে নিতে হবে একটি সর্বজনীন ‘ব্রডব্যান্ড নীতি’ যা বাংলাদেশের জন্যে অতি জরুরী। ২০১৫ হ’তে আর মাত্র তিন বছর বাকি, বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে?

বাংলাদেশে এখনও উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যয়বহুল। এমনকি সাধারনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সংযোগ প্রক্রিয়া অতি জটিল ও হাস্যকর নিয়ন্ত্রনের অধীন! প্রতিবেশী দেশ ভারত বা শ্রীলঙ্কা এমন কি ভুটানও নিজেদের জন্যে সাশ্রয়ী মুল্যে ইন্টারনেট মুল্য নির্ধারণ করে তা দ্রুততম সময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। আর আমরা এখনও একটি ‘তরুন বান্ধব ইন্টারনেট বিতরন নীতি’ পর্যন্ত তৈরি করতে পারিনি।

আমাদের বিশ্বাস সরকার ‘ইন্টারনেট অধিকার’ বিষয়টি সম্যক অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও চলমান প্রক্রিয়াগুলোর সাথে নিজেকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করবে। সারা দেশে বিশেষ করে তরুণদের জন্যে উচ্চ গতির ইন্টারনেট উন্মুক্ত করে সৃজনশীল আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে তাদের উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেবে। ব্যাংকগুলো যেন সহজতর প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে টাকা পেতে ছেলেমেয়েদের সহজ সুযোগ করে দেয় তার জন্যেও উদ্যোগ দরকার। এই ক্ষেত্রে কর দেয়া-নেয়া নিয়ে চলছে এক আজব অরাজকতা! কেউ যেন কিছুই বুঝতে চাইছে না!

আমাদের মিশনগুলো মুখ দেখে কথা বলে। কখনো কোন আগ্রহী তরুনের কাজ পেতে সামান্য সহযোগিতা এরা করে না! এই দেশের মানুষ কখনো কোন দূতাবাস বা মিশন থেকে একটিও উদ্যোগের খবর পায়নি। অথচ ভারত বা শ্রীলঙ্কায় খোলা হয়েছে বিশেষ ‘প্রবাসী’ জানালা যা দিয়ে শুধু তরুণদেরই কাজের খোঁজখবর পাওয়া যায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারের সাধারন পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক গেছেন । আমরা আশা করতে চাই তিনি ফিরে এসে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে উদ্যমী, উৎসাহী তরুণদের সৃজনশীল কাজের জন্যে সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তিকে সম্মানের সাথে বিবেচনা করবেন।

Image Source: http://www.fightforthefuture.org/billboard

2 thoughts on “ইন্টারনেট অধিকার

  1. ২০০০ সালের শুরুর দিকে আইটি পার্ক স্থাপনা (যা আপনার ‘প্রবাসী’ জানালাকে ধারণ করতে পারত) নিয়ে সরকার অনেক বড় বড় উদ্যোগ নেবার কথা বলেছিল। আমি ঐ সময় বেশ কিছু নীতিনির্ধারকের সাথে কথা বলেছিলাম, আমাদের একটি ক্লাস প্রজেক্টের সূত্রে। সবার মাঝে একটা ধোঁয়াশা ছাড়া আর কিছু দেখিনি। আমি তখন মনে করতাম, হয়ত আমরা অগুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মূল কথাগুলো আমাদের বলছেননা (সেটাও হতাশাজনক কম নয়)।

    এরপরে আর খোঁজ রাখা হয়নি। পরে শুনেছিলাম এইরকম আইটি পার্ক নাকি বাংলাদেশে আছে। তারা কি ধরণের সুযোগ করে দিচ্ছে? আদৌ কি কোন সুযোগ করে দিচ্ছে? নাকি কেবল নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হয়ে আছে? এ ব্যাপারে একটা পোস্ট দিন। (ডিজিটাল?) বাংলাদেশের এখনকার অবকাঠামোতে কি কি আছে?

    1. আই টি পার্ক যেটা হবার কথা তার কী হয়েছে আমার জানা নেই, কারন এর কোন তথ্য পাওয়া যায় না। আর যেটা আছে বলে আপনি শুনেছেন তা সম্ভবতঃ জোট সরকারের আমলে স্থাপিত ‘ইন কিউবেটর’ টাইপ কিছু একটা হয়েছিল কাওরানবাজারের একটি দালানে, যার ফলাফল আমাদের জানার অগোচরে। কিছুদিন যাবত কাওরানবাজারের আর একটি দালানে এইরকম ‘পার্ক’ টাইপের আর একটা কিছু করার খবর কাগজে দেখেছি সেটা কি, আমি জানিনা বা ভাল করে কোথায় গেলে জানা যাবে তাও কেউ জানে বলে মনে হয়না।
      ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি রুপকল্প – এর বাস্তবায়নের তথ্য নিচ্ছি। একটা আলাদা লেখা লিখবার ইচ্ছা আছে।

Leave a Reply