April 23, 2024

source: abusehurts.com

আমাদের আইনি ব্যবস্থায় হত্যা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্বীকৃত হলেও বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা স্বীকৃত নয়। শিরোনামটিই বলে দিচ্ছে, আমাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার পরিবর্তন হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্যের হেরফের হয় না। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক আমাদের তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা-সংক্রান্তে আয়োজিত এক সেমিনারে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিল, তাতে আমাদের তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক কর্তাব্যক্তি জানতে চান, দেশে চলমান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে তার সরকারের অবস্থান কী? তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমাদের দেশের সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করে না। আগের বিএনপি সরকার এর প্রচলন করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো সরকার অনুমোদন করে এটি স্বীকার করার সুযোগ কোথায়? প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের ভেতরে এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার বিষয়ে জানার ইঙ্গিত ছিল, যা উত্তরে পাওয়া যায়নি। এটি সরাসরি সামনে বসে দেখা একটি অভিজ্ঞতা বিধায় উল্লেখ করলাম, কিন্তু আমাদের বর্তমান এমপি, মন্ত্রীরা এ বিষয়ে এর থেকে পৃথক কোনো ভাষা প্রয়োগ করছেন কি? বিগত সরকারের আমল থেকে কে যে সরকারের কোন বিষয়ের মুখপাত্র, সেটাই বুঝে ওঠা গেল না। এখন যেমন খাদ্যমন্ত্রী সব আইনি বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন, তথ্যমন্ত্রী হেন বিষয় নেই যেটি নিয়ে কথা বলেন না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের ভাষ্য মোটামুটি একই। তবে বিগত ২০০৯ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তত্কালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু ঘটনা আছে যার বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় করা সম্ভব নয়, তাই সরকারকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে, যত দিন পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা না যায়। (এ লিংকে সে তথ্য পাওয়া যাবে: http://www.theguardian.com/world/2011/jan/26/ bangladesh-death-squad-killings-britain) ২০০৯-এ সরকারের অবস্থান অনেক পরিষ্কার ছিল।
এ আলোচনাকে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমে এটুকু প্রতিষ্ঠা করা দরকার যে, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নির্বিঘ্নে চলছে এবং এটি বন্ধ করা হচ্ছে না। আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয় বিগত ১৬ ফেব্রুয়ারি তার এক বক্তব্যে বলেন, দেশে এখন ‘ক্রসফায়ারের’ পরিবর্তে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নাম দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। ঠিক তাই, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো নাম পাল্টেছে, গল্পের ধরন পাল্টায়নি।
আমাদের আইনি ব্যবস্থায় হত্যার যে বিধান আছে, তা নিয়ে মানবতাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে বিলোপের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এখন মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান বিলোপ করা হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তিই আছে। এসব যুক্তির কোনটি শেষ বিচারে টিকবে, তা নির্ভর করে সমাজ পরিবর্তনের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বের অন্য দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে নানা কথা বললেও নিজের দেশে গড়ে ৪৩টি মৃত্যুদণ্ড প্রতি বছর কার্যকর করে। এ উদাহরণ, মৃত্যুদণ্ড চালু রাখার পক্ষে যুক্তি খোঁজার জন্য নয়, বরং শাস্তি প্রদানের পেছনের রাজনীতি বোঝার প্রয়োজনে। বিচার সব সময়েই একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। একটি দেশের রাজনৈতিক আদর্শের ওপর নির্ভর করে সে দেশের বিচার তথা শাস্তি প্রদানের কঠোরতা কতখানি হবে। আইনবিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বিচার শেষে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু তত্ত্ব বা দর্শন বিবেচনায় নেয়া হয়, যা দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন। বর্তমানে যে দর্শনটি সবচেয়ে বেশি দেশে প্রয়োগ করতে দেখা যায় তার নাম হলো সংশোধন তত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, কোনো ব্যক্তি বিচারে অপরাধী প্রমাণ হলে তাকে শাস্তি দেয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজ থেকে আলাদা করে বিভিন্ন রকম শিক্ষা ও মানসিক সাহচর্য প্রদান করে তার সাজার মেয়াদ শেষে তিনি যেন সমাজে পুনরায় সাধারণ নাগরিকের মতো জীবনযাপন করতে পারে, সেভাবে প্রস্তুত করে তোলা। কোনো একজন নাগরিক যখন অন্য একজন নাগরিকের প্রতি কোনো অপরাধ করেন, তখন তিনি সমাজে একসঙ্গে বাস করার অনেক লিখিত এবং অলিখিত নিয়ম ভঙ্গ করেন, তাই তিনি যদি সংশোধন না হন, তাহলে শাস্তির মেয়াদ শেষে সমাজে ফিরে এসে তিনি আবারো একই অপরাধ করতে পারেন। আমরা কার্যত তা-ই দেখি। এর সঙ্গে তাই জেল ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়টিও উঠে আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, জেলে থেকে অপরাধী কিংবা যারা বিচারের অপেক্ষায় আছেন, তারা অনেক বেশি অপরাধী হয়ে উঠছেন। যারা হয়তো সাধারণ অপরাধের কারণে জেলে গেছেন, তারা দাগি আসামিদের পাল্লায় পড়ে অপরাধ সংঘটনে হাত পাকিয়ে বাইরে আসছেন। তাই জেল ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের সমাজে নিয়মিত ঘটে— এমন অপরাধগুলোকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, কিছু অপরাধ বারবার ঘটে এবং অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীও একই ব্যক্তি। এসব ব্যক্তিকে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসার অভিযোগ করা হয়, অথচ যেসব আইনজীবীদের অজ্ঞতা আর ব্যর্থতার কারণে এসব আসামি ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়, তাদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয় না। আইনজীবী মাত্রই মনে করেন, ফৌজদারি আইন অত্যন্ত সোজা; কিন্তু কাজেকর্মে আমরা এ সোজা বিষয়টির সঠিক প্রয়োগ দেখি না।
আমাদের দেশে আইনের প্রয়োগে যেমন সমাজ ব্যবস্থার অন্তর্গত দ্বন্দ্বের প্রভাব রয়েছে, তেমনি বিচার প্রক্রিয়ায়ও রয়েছে। তাই একটি দেশের রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি দেশের অপরাধ কেমন হবে এবং কারা এর পেছনে থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশে শহরাঞ্চলে কোনো অপরাধ হলে প্রথমেই খোঁজা হয় অপরাধী কোন বস্তিতে থাকে? ইংল্যান্ডে দেখেছি কালোদের ওপর প্রাথমিক সন্দেহে স্থাপন করতে। সমাজ নির্দিষ্ট করে অপরাধী কারা, এখানে অপরাধের চেয়েও শ্রেণী-সংঘাত মুখ্য হয়ে ওঠে। বস্তিতে থাকা একজন ব্যক্তি যেমন অপরাধী হতে পারেন, তেমনি সমাজের উঁচু স্তরে থাকা মানুষও অপরাধী হতে পারেন। আবার এ শ্রেণী বিভাজনের কারণে উঁচু শ্রেণীতে থাকা মানুষ তাদের অপরাধের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করেন অপেক্ষাকৃত অর্থনৈতিকভাবে নিচু শ্রেণীতে থাকা মানুষদের। মূল অপরাধীরা সবসময়েই আড়ালে থেকে যান আর আমরা সেই অপরাধে সহায়তাকারীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ফলে অপরাধী ধরা পড়লেও অপরাধ বন্ধ হয় না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই অপরাধ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে তাই অপরাধ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এর পাশাপাশি রাজনীতিও হয়ে উঠেছে এ প্রক্রিয়া জারি রাখার অংশবিশেষ। ফলে নতুন নতুন অপরাধ আর অপরাধী তৈরি হচ্ছে। স্বার্থের টানাপড়েন তৈরি হলেই কেবল এসব অপরাধ ও অপরাধীরা আমাদের সামনে চলে আসে। তার আগ পর্যন্ত সাধারণ নাগরিকরা জানতেই পারেন না কোথায় কী হচ্ছে। কার ভালো থাকা অন্যের মন্দ থাকার কারণ হয়ে উঠছে? কে কার আর্থিক সুবিধা লাভের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? আর এ বাধা সরাতে কোন প্রক্রিয়া বেছে নেয়া হচ্ছে? এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো, জীবনের তরে সরিয়ে দেয়া। সাধারণ হত্যা বা খুন আদিকাল থেকেই চলে আসছে। সাধারণত হত্যা বা খুনের পেছনে যে কারণ থাকে তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগের কথাও যদি ধরি তাহলে দেখব, আমাদের দেশে রাজনৈতিক হত্যার পাশাপাশি পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সম্পত্তির দখল এসবই ছিল মূল কারণ। কিন্তু বর্তমানে এতটা সরলভাবে বলা মুশকিল— কোন কোন কারণে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে সবকিছুর পেছনে ক্ষমতা আর বিত্তের সংযোগ থাকে এটা বলা যায়। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে হত্যা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। অনেক উল্লেখযোগ্য হত্যার মধ্যে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, জেলখানায় চার নেতা হত্যা, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যা অন্যতম। এ হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। এর বাইরে রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার অজুহাতে নিয়মিত হত্যাকাণ্ড তো আছেই, সেসব অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর দেশে যে মাত্স্যন্যায় শুরু হয়েছিল, তা পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের অপারেশন ক্লিন হার্ট থেকে শুরু করে বিলোপ করার চেষ্টার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শুরু। তারপর ২০০৪ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গঠনের পেছনে উদ্দেশ্য যা-ই বলা হোক না কেন, এটি যে মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার লুক্কায়িত ইচ্ছা থেকে সৃষ্ট তা ধারণা করা যায়। তবে এসব এলিট বাহিনীই প্রথম এ দেশে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে, এমনটা বলা ভুল হবে। পুলিশ এ কাজে হাত পাকিয়েছে অনেক আগেই। আমরা বিগত ২০০১ পরবর্তী সরকারের আমলে কেরানীগঞ্জে— পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় আসামির লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি; খবরে বলা হয়েছে, পালিয়ে যাওয়ার সময় উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত! পরে এ নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট মামলা হলে তাতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করে, যেখানে বলা হয়, গুলি করা সঠিক ছিল। এভাবেই ধীরে ধীরে বেআইনি হত্যা আইনি কাঠামোয় পাকাপোক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। আমরা এসব ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখি রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের ঘটনাপ্রবাহ অতীতের সব ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। আগে ধারণা করা হতো কোনো হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারো না কারো, বিশেষ করে ক্ষমতাবান কারো হাত থাকত বা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য লুক্কায়িত থাকত। কিন্তু এখন কে বা কারা গুম কিংবা হত্যার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যে কেউ, যেকোনো মুহূর্তে হাওয়া হয়ে যেতে পারেন। কেন, কীভাবে হাওয়া হলেন তা কখনই প্রকাশ পাবে না। অপরাধ এবং অপরাধীর জন্ম দেয় সমাজ ব্যবস্থা, তাই নিশ্চিত করে বলা যায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হলেই তিনি কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না। হাতে বন্দুক তুলে দিয়ে সেটি যখন আমার আপনার দিকে তাক করা থাকে, তখন বেশি কথাও বলা যায় না, পাছে ভুলে গুলি বেরিয়ে পড়ে!
২০০৪ সালের ২১ জুন থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে র্যাবের কাজ নিয়ে কম কথা হয়নি। কোনো দাগি আসামিকে ক্রসফায়ারে মারা যেতে দেখে আমরা চুপ থেকেছি। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রও কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা এটুকু বুঝতে ভুল করেছি যে, এই হত্যার সংস্কৃতি থেকে একসময় সাধারণ মানুষও রেহাই পাবে না। এটি এ সিস্টেমের অংশ। আমাদের যেখানে আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে শক্ত করার কথা ছিল, সেখানে আমরা সোজা পথে হত্যার রাস্তা বেছে নিয়েছি। তার মাশুল এখন সবাইকে গুনতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। পৃথিবীর অনেক দেশেই আমাদের চেয়েও বেশি সমস্যা আছে, কিন্তু সেসব দেশে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ আছে বলে শোনা যায় না। আমেরিকায় সিআইএ কিংবা এফবিআইএ নীরবে এ ধরনের কাজ করেন বলে অভিযোগ আছে, কিছু সে দেশের নেতারা সব সাধু-সন্ন্যাসী, মুখ ফুটে আমাদের নেতাদের মতো বলেন না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত ২০১১ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কেবল র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে সাতশরও বেশি মানুষ। চলতি বছর নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সংস্কৃতিমন্ত্রীর গাড়িবহরে গত বছর যে হামলা হয়েছিল, তার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয় এমন ছয়জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তাছাড়া অতি সম্প্রতি, চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল কুমার চৌধুরী র্যাব কর্তৃক অপহূত হয়েছেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, পরে তাকে কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করা হয়। এসব পরিসংখ্যান কেবল যে র্যাবের ক্ষেত্রে ভারী হচ্ছে তা নয়, পুলিশও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যার বৃদ্ধি কিংবা কম হিসাব করে দেখানো আমার মূল উদ্দেশ্য নয়, বরং এটি এখনো টিকে থাকার পেছনে যে মনস্তত্ত্ব ও সামাজিক প্রয়োজন কাজ করে, সেটি অনুসন্ধান করাই মূল উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র কোনো একক স্বার্থের ধারক-বাহক হয়ে চিরকাল চলতে পারে না। তাকে কোনো না কোনো সময় সমষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে হয়। আমরা শুধু এটুকু বুঝতে চাই, আমার কোনো অন্যায় হলে আমাকে কোনো বাহিনী রাতের আঁধারে তুলে নেবে না, বিচারের মুখোমুখি করবে এবং সমাজে ফিরে আসার, সবার সঙ্গে বসবাসের সুযোগ করে দেবে। দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা এটুকু নিরাপত্তা চাইতেই পারি।
বণিক বার্তায় প্রকাশিত

Leave a Reply